নিজস্ব প্রতিনিধি: দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আচমকা বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসির ভূমিকা নিয়ে বুধবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে নালিশ ঠুকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বিকালে ডিভিসিকে কাঠগড়ায় তুলে চিঠি পাঠিয়েছেন। চার পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা বলে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ২ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে।’ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির কারণে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে শিগগিরই এক রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এদিন সেচ দফতর থেকেও ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে কড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে আগামী ৩-৪ দিন থেকে জল ছাড়া বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এদিন উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পরে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে এক হাত নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘ডিভিসি কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছে।’
আচমকা বৃষ্টি আর তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত বিভিন্ন জলাধার থেকে বিরামহীনভাবে জল ছাড়ার কারণে হাওড়া, হুগলি সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে হাওড়া ও হুগলির বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যাওয়ার আগেই বাংলার বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ নিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সেই ফোন ধরতে পারেননি মমতা। পরে তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য ফোনালাপে ডিভিসিকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বন্যা বলেও নালিশ ঠুকেছেন তিনি। বার বার বলা সত্ত্বেও ডিভিসি জলাধারের পলি পরিস্কার করছে না বলেও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সমস্তটা শুনে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। এমনকি বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারকে সব রকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
বন্যা কবলিত আমতা থেকে ফিরেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘এই বন্যা ম্যান মেড। পাঞ্চেত, মাইথন এবং তেনুঘাট জলাধার থেকে ২ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার জেরে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা কার্যত ডুবতে বসেছে। ইতিমধ্যে ১৬ জনের অকালে মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে বহু চাষের জমি, রাস্তা এবং সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ২০১৫ সাল থেকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও যে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জলাধার সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি, চিঠি তা উল্লেখ করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সমস্যার মোকাবিলায় যাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই অনুরোধও জানিয়েছেন মমতা।
ডিভিসির বিভিন্ন জলাধার থেকে বাড়তি জল ছাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের যে সারবত্তা রয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এদিন মমতার সঙ্গে মোদির কথা বলার কথা জানিয়ে পিএমও’র পক্ষ থেকে যে ট্যুইট করা হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, ‘জলাধার থেকে জল ছাড়ার জন্য বাংলার কিছু জায়গায় হওয়া বন্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে সমস্তরকম সাহায্য করা হবে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য প্রার্থনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’