পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতে তৈরি কাফ সিরাপ খেয়ে গাম্বিয়ায় ৬৬ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। হরিয়ানার নিয়ামক সংস্থার তরফে কাফ সিরাপ প্রস্তুতকারী সোনিপতের কারখানা মেডেন ফার্মায় অভিযান চালিয়ে ১২টি গাফিলতির অভিযোগ সামনে এসেছে। শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ‘হু’- এর উদ্বেগের পরেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র সরকার।
সোনিপতের কারখানা মেডেন ফার্মায় অভিযান চালানো হয়। তার পরেই গলদগুলি সামনে আসে। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থাকে শো-কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানার ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। হরিয়ানা সরকারের তরফেও তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তে নেমে হরিয়ানার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থায় বেশ কিছু গলদ খুঁজে পাওয়ার পরেই সংস্থার কাছে কৈফিয়ৎ তলব করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার বুধবার কেন্দ্র চার সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করেছে। সেখানে ‘হু’ -এর থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টগুলি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সরকারি এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই রিপোর্টগুলি বিশদে পর্যালোচনা করে ওই চার সদস্যের কমিটি ড্রাগস কন্ট্রোলার অফ ইন্ডিয়াকে (ডিসিজিআই)জমা দেবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপগুলি নেওয়া হবে।
হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ জানিয়েছেন, সোনিপতের কারখানাটি ‘হু’ এর তরফ থেকে উল্লেখ করা, ড্রাগের তিনটি নমুনা শনাক্ত করেছে। সেগুলি কলকাতার একটি গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনও রিপোর্ট আসেনি। তবে কেন্দ্র ও হরিয়ানার নিয়ামক সংস্থার তরফে কারখানাটিতে অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে ১২টি গাফিলতির অভিযোগ সামনে এসেছে। এই তথ্যকে মাথায় রেখে আপাতত কারখানাটির সম্পূর্ণ উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটিকে শোকজ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সংস্থাটি তাদের উৎপাদন সামগ্রীর লগ বুক, সিরাপ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেখাতে পারেনি।
সেই শোকজ নোটিশে সংস্থার থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন ওষুধ তৈরির নিয়ম লঙ্ঘনের পরেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সাতদিনের মধ্যে ওই সংস্থাকে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে হবে। অন্যথায় ১৯৪০ এবং ১৯৪৫ ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস আইনে সংস্থার বিরুদ্ধে এক তরফা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে গাফিলতিগুলি সামনে এসেছে তা হল তদন্তের সময়ে হরিয়ানার ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা লগবুক দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। যে চারটি কাফ সিরাপের উপাদান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা কীভাবে প্রস্তুত করা হয় ও কী কী সামগ্রী তাতে ব্যবহার হয়, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য জানানো হয়নি। যে চারটি কাফ সিরাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তার ব্যাচ নম্বর ও উৎপাদন সংক্রান্ত কোনও তথ্যই দেয়নি সংস্থা। ওষুধ তৈরির অ্যানালিটিক্যাল পদ্ধতি সম্পর্কেও কোনও তথ্য জানানো হয়নি।
এর আগে দেশের চার রাজ্যের তরফে এই কাফ সিরাপগুলির গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এবং তা গুণমান উত্তীর্ণ করেনি বলেই জানানো হয়েছিল। ২০১১ সালে ভিয়েতনামেও এই সংস্থার ওষুধগুলি ব্যান করে দেওয়া হয়।