পুবেরকলম ওয়েবডেস্ক: আসন্ন গ্রামবাংলা দখলের ভোটযুদ্ধ রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ আধিকারিকদের। তাই হিংসার ঘটনা রুখতে তিন থেকে চার দফায় পঞ্চায়েত ভোট করানোর চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। উৎসবের মরশুম কেটে গেলেই এ বিষয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে অতি সংবেদনশীল বুথে যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী কিংবা ভিনরাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেই আর্জিও জানাবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের। রাজ্য কোষাগারের যা হাল, তাতে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা সম্ভব নয় বলে শনিবার রাজ্যের এক শীর্ষ আমলা জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে প্রথমে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ। কিন্তু শেষপর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা গড়ানোয় তিন দফায় ভোট করানো যায়নি। ১৪ মে এক দফাতেই পঞ্চায়েতের তিন স্তর মিলিয়ে ৫৯ হাজার আসনে ভোট নেওয়া হয়েছিল। ভোট গণনা হয়েছিল ১৭ মে। গত পঞ্চায়েত ভোটের দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার বলি হয়েছিলেন ১৮ জন। ভোট গণনার দিনেও রক্তপাত না ঘটলেও বিচ্ছিন্ন অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা মনে করছেন, গত ভোটের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। লোকসভা ভোটের আগে গ্রাম বাংলা দখলের ভোটযুদ্ধ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রত্যেকটি দলের কাছেই সেমিফাইনালের লড়াই। তাই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে মরণ ঝাঁপ দেবে প্রতিটি দলই। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন পর্ব থেকেই কার্যত গ্রাম বাংলায় রক্তক্ষয়ী লড়াই হতে পারে। এক দফায় ভোট করালে সঠিক নিরাপত্তার বন্দোবস্থ করা যাবে না। তাই তিন থেকে চার দফায় ভোট করাতে চাইছেন তাঁরা।
চার দফায় ভোট করাতে হলে কোন দফায় কোথায় ভোট হবে তা প্রাথমিকভাবে ঠিক করে ফেলেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের শীর্ষকর্তারা। প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর এবং মালদায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তৃতীয় দফায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় এবং চতুর্থ দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় ভোট করানো হবে। যদি তিন দফায় ভোট করাতে হয় তাহলে এক দফায় উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা, এক দফায় দক্ষিণবঙ্গের ৯ জেলা (মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও হুগলি) এবং চূড়ান্ত দফায় দক্ষিণবঙ্গের চার বড় জেলায় (হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া) ভোট করানো হবে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘এবারের গ্রাম বাংলার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে করানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তার জন্য নিরাপত্তার দিকে যেমন নজর দেওয়া হবে তেমনই ভোটকর্মীদের উপরে যাতে মানসিক চাপ তৈরি না হয়, সে-বিষয়টিও নজরে রাখা হবে। উৎসবের মরশুম মিটে যাওয়ার পরেই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করা হবে।