বিশেষ প্রতিবেদন: বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এর সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে কাজের বাজারে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। ‘হয় ছাঁটাই, না হলে নিয়োগে না’, কোম্পানিগুলোর পলিসি এখন এটাই। ফলে কর্মজগতে সর্বত্র একটি অনিশ্চয়তার পরিবেশ দেখা দিয়েছে। যার ফলসরূপ অগাস্টে বিশ্বে ৬০টি’র মতো শীর্ষ কোম্পানি তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে।
এবার বৈশ্বিক মন্দার কারণে আরও কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে। কর্মী ছাঁটাইয়ের মূল কারণ বিশ্বব্যাপী মন্দা, আর্থিক ক্ষতি, দক্ষ কর্মীর অভাব।
গ্লোবাল ডেটার নিউজ ডাটাবেস অনুসারে, শুধুমাত্র আগস্ট ২০২২ সালে, ৬০টিরও বেশি নামি সংস্থা কর্মী ছাঁটাই ঘোষণা করেছে।
মাইক্রোসফট, অ্যাপল, টেনসেন্ট, শাওমি এবং স্ন্যাপ সহ বৃহৎ কর্পোরেটগুলি সংস্থাগুলি বৈশ্বিক অনিশ্চিয়তা, আর্থিক মন্দার কারণে কর্মী ছাঁটাই করেছে।
গবেষক লেখক শেরলা শ্রীপ্রদা এই প্রসঙ্গে কর্পোরেট জগতে মাইক্রোসফটের মতো একটি নাম উল্লেখ করে বলেছেন, মাইক্রোসফটের মতো একটি কোম্পানিও কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে।
গ্লোবাল ডেটা গবেষণাকে সামনে রেখে শেরলা শ্রীপ্রদা জানিয়েছেন, মাইক্রোসফট ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক মন্দার ফলে তার ১ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসাবে গবেষণা ও উন্নয়ন দল থেকে অতিরিক্ত ২০০ কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করেছে। জানুয়ারি ২০২২ এর তুলনায় কোম্পানি আগস্ট মাসে চাকরির বিজ্ঞাপন ৪৭ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
ডাব্লিউআইওএন-এর গবেষণা অনুসারে নামি কোম্পানিগুলি কর্মী ছাঁটাইয়ের আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি চিনের আলিবাবা কোম্পানিটি বিক্রিতে মন্দা ও বর্ধিত খরচে হ্রাস টানতে ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। টেনসেন্ট চিনের ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রি একই পথে হেঁটেছে। খরচ বাঁচাতে কোম্পানিটি চলতি বছরে এই প্রথম সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে।
কয়েনবেস গ্লোবাল আইএনসি বলছে, বৈশ্বিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলি কর্মসংস্থান কমানো ও কর্মী ছাঁটাইয়ের এই পথ দীর্ঘায়িত করবে।
একইভাবে ফেসবুক (মেটা) বাণিজ্য এবং মেসেঞ্জার কিডস সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের জন্য নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। যা খুব স্বাভাবিকভাবেই কর্মী ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে।
ফেসবুক কর্ণধার জুকারবার্গ বলেছেন, ‘আমি সব সময় এখানে বসে থাকতে পারি না, তবে বলতে পারি পরিস্থিতির পরিবর্তন অনুযায়ী চাকরি হারাতে হবে না’।
এই মাসের শুরুর দিকে গুগল এবং অ্যালফাবেট- এর সিইও সুন্দর পিচাই চাকরি ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়েছেন, দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে কোম্পানির দক্ষতা ২০ শতাংশ বেড়েছে। পিচাই এই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, কর্মীরা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সঠিক কাজ ও উৎপাদনশীলতার কথা মাথায় রেখে আমরা দক্ষ কর্মী, সময়, পরিস্থিতির উপর লক্ষ্য রেখেছি। পিচাইয়ের কথা কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস মহামারীর কারণে ফের কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করেছে। গোল্ডম্যান স্যাকস ৫ শতাংশ স্বল্প দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই করতে পারে। নিয়োগ পদ্ধতি ধীর করার পাশাপাশি, কর্মচারীদের পারফরম্যান্সে যে তারা খুশি নয় এমনটাও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এর ফলে ৫০০ থেকে ২৪০০ কর্মীর জীবন অনিশ্চিত হতে পারে।
বর্তমান সময় বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার প্রভাবে বিপর্যস্ত কাজের বাজারে। স্বল্প দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই করে দিয়ে একটি ‘কর্মসংস্কৃতি’ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কোম্পানিগুলি। যা পরবর্তীকালে কোম্পানির পক্ষে লাভজনক হয়ে উঠবে এমনই মত উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস আবহে বৈশ্বিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বৈশ্বিক মন্দা ২০২০ সালের শুরুতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এটা গ্রেট লকডাউন বা গ্রেট শাটডাউন নামেও পরিচিতি পেয়েছে। ২০২০ শেয়ারবাজার ধস নামে। এর পরে চলে আসে কোভিড-১৯ অতিমারি। যা গোটা বিশ্বে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যা বিশ্বের অর্থনীতির ভিতকে নাড়িয়ে দেয়।