পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: কেউ বলছেন কুসংস্কার। কেউ বলছেন ভক্তি। কেউবা বলছেন, ‘ভক্তি মানে না কোনো যুক্তি’। মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর নিজের জিভ কেটে মন্দিরের দরজার সামনে দেবীকে উৎসর্গ করলেন উত্তরপ্রদেশের এক কৃষক। শনিবার যোগী রাজ্যের একটি জনপ্রিয় মন্দিরের এই ঘটনা রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করার পর কুসংস্কারের এমন নজির দেখে হতবাক অনেকেই। ৪০ বছর বয়সী ওই কৃষক এবং তাঁর স্ত্রী দুজনেই এসেছিলেন পুজো দিতে। পুজো শেষ হওয়ার পর হঠাৎই একটি ছোটো ছুরি বের করে নিজের জিভ কেটে ওই ব্যক্তি মন্দিরের দরজার সামনে রেখে দেয়।
তাঁর স্ত্রীও সেই ঘটনা দেখে হতবাক। তাঁর স্ত্রীও ভাবতে পারেনি যে তিনি এমন কাজ করবেন। ঘটনার পর মন্দিরে ডিউটিরত পুলিশ অন্যান্য ভক্তদের সাহায্য নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখন তিনি চিকিৎসাধীন। পুলিশ আধিকারিক অভিলাষ তিওয়ারি জানিয়েছেন, ওই ভক্তের স্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, তাঁর স্বামী দেবীকে খুশি করার জন্য এমন কাজ করেছে। কিন্তু এমন কাজ করার পিছনে কি যুক্তি বা ব্যাখ্যা রয়েছে, তা বর্ণনা করতে পারেননি ওই ব্যক্তির স্ত্রী। পুলিশ আধিকারিক তিওয়ারি বলেছেন, নিজের অঙ্গচ্ছেদ এমনকি মানব বলি ভারতের একটি বড় সমস্যা। কারণ জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও কুসংস্কার বয়ে বেড়াচ্ছে এবং কখনও কখনও দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তারা এমন উদ্ভট কাজ করে থাকেন।
গত বছরও ভারতের দুটি রাজ্য এমন ঘটনার সাক্ষী ছিল। ২০ বছর বয়সী দুজন যুবক নিজেদের জিভ কেটে দেবীর পায়ে উৎসর্গ করেছিল। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার এক গৃহবধূও এই একই কাজ করেছিলেন। ২০২০ সালে একজন পুরোহিত স্থানীয় এক কৃষকের শিরোচ্ছেদ করে তাকে বলি দেন। এরপর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, দেবতা স্বপ্নে তাঁকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। এইসব ঘটনার পাশাপাশি সদ্যজাত সন্তানকে নদীর জলে দেবতার নামে উৎসর্গ করারও প্রচলন আছে।
একসময় নতুন ব্রিজ উদ্বোধন করার জন্যও নরবলি দেওয়ার প্রবণতা ছিল। সেক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হত শিশু-কিশোরদের। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ২০৪৭ সালে ভারত উন্নত দেশের তালিকায় নিজের নাম নথিভুক্ত করবে। প্রশ্ন উঠছে, এমন কুসংস্কারে জর্জরিত দেশ সত্যিই কি আর মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত দেশের মাইলস্টোন ছুঁতে পারবে? এই উদ্বেগজনক ঘটনার পর বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠছে হাজারো প্রশ্ন।