পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ জঙ্গিদের জানাযায় শামিল হওয়াকে আর রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে গণ্য করা হবে না কারণ এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার বলে রায় দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ হাইকোর্ট। গত দু’বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার এক বিতর্কিত নীতি অনুসরণ করছিল। নিহত জঙ্গিদের শব তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হত না। কারণ সরকারের আশঙ্কা ছিল জঙ্গির জানাযাকে ঘিরে যে ভিড় জমা হবে তাতে বহু যুবক সন্ত্রাসবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গি আন্দোলনে যোগ দেবেন।
তাই বহু নিহত জঙ্গির দেহকে দূর-দূরান্তে কোনও কবরস্থানে দাফন করা হত। সেই জানাযায় শামিল হতেন নিহতের মুষ্টিমেয় কয়েকজন আত্মীয়। এছাড়া জঙ্গিদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে আর কাউকে অনুমতি দেওয়া হত না। আসলে সরকার এতটাই শঙ্কিত বোধ করত যে তারা জঙ্গির গায়েবানা নামায-জানাযায় (শব ছাড়া যে জানাযার নামায পড়া হয়) যারা শামিল হতেন তাদেরও অপরাধী বলে গণ্য করা হতো।
হাইকোর্টের বিচারপতি আলি মুহাম্মদ মাগরে এবং বিচারপতি মুহাম্মদ আকরাম চৌধুরির বেঞ্চ তাদের রায় দিতে গিয়ে বলেছে নিহত জঙ্গির নামায-এ-জানাযায় শামিল হতে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে গণ্য করা হবে না। এটা যদি অপরাধ বলে গণ্য করা হয় তাহলে যারা জঙ্গির নামায-এ-জানাযায় শামিল হয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
এই অধিকার ভারতের সংবিধানের ২১নং ধারায় দেশের নাগরিকদের জন্য সুনিশ্চিত করা হয়েছে। হাইকোর্টের বেঞ্চ পাশাপাশি, ইউএপিএতে গ্রেফতার অনন্ত নাগের দু’জনকে বিশেষ আদালতের জামিন দেওয়ার নির্দেশকেও বহাল রেখেছে। কুলগামের দেবসারে মসজিদের এক ইমাম জাবেদ আহমেদ শাহ সহ দশজন গ্রামবাসীকে নিহত জঙ্গি মুদাসির মাগরের গায়বানা নামায-এ-জানাযায় শামিল হওয়ার জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল গত বছর ২১ নভেম্বর তারিখে।
পুলিশের অভিযোগ, তারা জঙ্গি মুদাসির মাগরের দেহ তার পরিবারের লোকের হাতে তুলে দেওয়ার পরও এক স্থানীয় ব্যক্তি ইউসুফ ঘানাই এলাকার মানুষকে গায়েবানা নামায-এ-জানাযায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। পুলিশ আরও অভিযোগ করেছিল, ইমাম নামায-এ-জানাযায় ইমামতি করেছিলেন। তিনি সেই সময় নাকি ‘স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।’ এতে নামায-এ-জানাযায় শামিল লোকেদের ‘ধর্মীয় আবেগ’ উসকে দেওয়ার কাজ করেন ইমাম।
কিন্তু আদালত এই সব যুক্তি খারিজ করে বলেছে, কোনও অজুহাতে মানুষের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার খর্ব করার অনুমতি দেওয়া যায় না। কারণ এই অধিকার সংবিধানের ২১নং ধারায় সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আদালত মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, ইউএপিএ আইনের ৪৩(ডি) (৫) ধারায় বলা হয়েছে আদালত যদি মনে করে প্রাথমিকভাবে এই ধারায় বন্দি অভিযুক্ত সত্যি দোষী তাহলে তাকে জামিন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যাদের ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য’ গ্রেফতার করে আনা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যদি তদন্ত করতে গিয়ে আপত্তিজনক কিছু না পাওয়া যায় তাহলে তার জামিনের আবেদন কীভাবে নাকচ করা যায়? গত জুলাই মাসে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল এবং বিচারপতি জাভেদ ওয়ানির বেঞ্চ এক নিহত জঙ্গি আমির মাগরের দেহ কবর থেকে তুলে আনার অনুমতি দেয়নি তার পরিবারকে। অথচ একক বেঞ্চ সরকারের বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে জঙ্গির দেহ কবর থেকে তুলে তার পরিবারের হাতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নিহত আমিরের পরিবার দাবি করেছিল আমির নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও আরও তিনজনের সঙ্গে তাকে এনকাউন্টারে জঙ্গি বলে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছিল। এই চারজনকেই দাফন করা হয়েছিল জঙ্গিদের জন্য নির্দিষ্ট এক কবরস্থানে তাদের পরিবারকে না জানিয়ে। কিন্তু গণ প্রতিবাদের জেরে দু’জনের দেহ কবর থেকে তুলে তাদের পরিবারের হাতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমিরের দেহ তোলার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তার পরিবার মামলা করে।
গত মে মাসে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার নির্দেশ দেন আমিরের দেহ কবর থেকে তুলে তার পরিবারের হাতে দিতে হবে। তার পরিবার তার দেহকে তাদের নিজস্ব গ্রামের ইসলামের রীতি অনুযায়ী দাফন করবে। কারণ নিহতের মৃতদেহপরিবারের হাতে তুলে দেওয়াটা বাধ্যতামূলক সংবিধানের ১৪নং ধারায়। কিন্তু এই রায় বাতিল করে দেয় প্রধান বিচারপতি মিতাল এবং বিচারপতি ওয়ানির বেঞ্চ। বেঞ্চ রায় দেয় আমিরের পরিবারের কবর খুঁড়ে আমিরের মুখ দেখানোর অনুরোধ মানা যাচ্ছে না। আদালত তাদের রায়ে বলে আমিরের পিতা এবং তার পরিবারের ন’জনকে হান্দওয়ারায় আমিরের কবরের পাশে ফাতেহা (প্রার্থনা) পড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।