পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের জন্য ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তার মধ্যে অন্যতম হল তিস্তার জলবণ্টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিস্তার জল বণ্টন চুক্তির অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভর করছে।’ চার দিনের ভারত সফরে আসার আগে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সফর সামনে রেখে উভয় পক্ষ বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। তাই এর সমাধান হওয়া উচিত। তবে এটা মূলত ভারতের ওপর নির্ভর করে।মাঝে মাঝে বাংলাদেশের জনগণ তিস্তা নদীর কারণে সমস্যায় পড়েন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই সমস্যা সমাধানে আগ্রহী।
গত ২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সাতটি নদীকে জলবণ্টনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ভারত সফরে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী সদ্য শপথ নেওয়া রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের সঙ্গে দেখা করবেন বলে শোনা গিয়েছে। বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে হাসিনা শেষবারের মতো ভারত সফরে এসেছিলেন।এদিন তিনি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও জানান, আমরা শুধুমাত্র গঙ্গার জল ভাগ করে নিই। তবে অন্য আরও ৫৪ টি নদী আছে, সেগুলি নিয়েও সমস্যা রয়েছ,যার একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং সমাধান হওয়া উচিত।
ভ্যাকসিন ‘মৈত্রী কর্মসূচির’ জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।একই সঙ্গে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাকে একটি “বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ” বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রবিবার শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের সম্পর্কের প্রশংসাও করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন আমি আমার পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছিলাম, তখন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
চিন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একদম পরিস্কার, সকলের জন্য বন্ধুত্ব, কারও জন্য বৈরিতা নয়। কোনো সমস্য যদি থেকে থাকে সেটি চিন ও ভারতের মধ্যে। আমি এতে নাক গলাতে চাই না। আমি আমার দেশের উন্নয়ন চাই।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা করোনা মহামারীর মোকাবিলা করেছি, ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধও আমাদের প্রভাবিত করেছে কিন্তু বাংলাদেশ সময়মত ঋণ পরিশোধ করছে। আমি মনে করি না আমরা কখনো শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হব’।
তার ছেলে সজীব ওয়াজেদের রাজনীতিতে যোগদানের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এই বিষয়টি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত, এই সিদ্ধান্ত আমি তাঁর ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি।বাংলাদেশের জন্য কাজ করছেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ তাঁর পরিকল্পনা। তিনি আমাকে এতে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। কিন্তু, তিনি এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনো মন্ত্রণালয়ে পদ নেওয়ার ব্যাপারে ভাবেননি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা প্রসঙ্গে বলেন, তারা আমাদের জন্য বড় বোঝা’। আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করছি। যাতে রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যেতে পারে। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি তবে সেটা আর কতদিন?হাসিনা এদিন আরও বলেন, এদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক চোরাচালানে, নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা যত তাড়াতাড়ি তাদের বাড়িতে ফিরে যাবে, আমাদের দেশের জন্য এবং মায়ানমারের জন্য ততই ভালো হবে।