পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে ১১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতকে মুক্তি দেওয়া হল। স্বাধীনতার দিন, অর্থাৎ সোমবারই বন্দিদেরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির আইপিসি ধারায় অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ সহ তার পরিবারের সাতজনকে হত্যার ঘটনায় ১১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন।
অভিযুক্তরা ২০০২ সালে গোধরা কাণ্ডের পরবর্তী সময়ে ওই পরিবারের সাতজনকে হত্যা ও বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ কাণ্ডে সাজা পায়। ঘটনার সময় বিলকিস বানো পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। সোমবার স্বাধীনতা দিবসের দিন গোধরা জেলের বাইরে বের করা হল গত ১৫ বছর ধরে জেলে থাকা এই ১১ জন বন্দি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০২ সালে গোধরা-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বারিয়া গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ সহ তার পরিবারে সাত সদস্যকে খুন করা হয়। যাবজ্জীবন সাজা হলেও সময়ের আগেই ছাড়া পেয়ে গেলেন এই ১১ জন। সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন সাজাপ্রাপ্তরা। আদালত গুজরাত সরকারকে এই আবেদন বিবেচনা করতে বলে। সোমবার গোধরা সাব-জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা।
২০০৮ সালে ২১ জানুয়ারি, মুম্বই সিবিআই আদালত বিলকিস বানোর পরিবারের সাত সদস্যকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে এগারোজন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। অভিযুক্তরা ১৫ বছর ধরে জেলে ছিলেন। এর পর তাদের মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টের কাছে সময়ে আগে মুক্তির জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানায়।
এই মামলায় প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা সুজল ময়ত্র জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারকে এই বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করতে বলেন। সেই অনুযায়ী সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কয়েক মাস আগে গঠিত এই ১১ আসামির বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটি সেই সিদ্ধান্ত গুজরাত সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল ১৫ আগস্টের দিন মুক্তির আদেশ দেওয়া হয়। তার পরেই ১১ জন কারাদণ্ডে দণ্ডিতকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিলকিস কাণ্ডে যারা মুক্তি পেল তারা হলেন রাধেশ্যাম শাহ, যশওয়ান্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা৷
হিউম্যান রাইটসের আইনজীবী শামশাদ পাঠান সোমবার বলেছেন যে, বিলকিসের মামলার চেয়ে কম জঘন্য অপরাধ করেছেন এমন বিপুল সংখ্যক আসামি কোনও কারণ ছাড়াই এখনও কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুজরাতে গোধরায় অযোধ্যায় থেকে ফেরা একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে৷ এতে মারা যান জন তীর্থযাত্রী এবং করসেবক৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে দাঙ্গার রূপ নেয়। গত ৩ মার্চ
দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালায়৷ সেই সময় বিলকিস পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে গণধর্ষণ করা হয়। তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়৷ পরিবারের বাকি ছয় সদস্য জন সদস্য পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। আদালতে এটাই জানানো হয়েছিল৷ এই ঘটনায় ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রথমে আমেদাবাদে এর বিচারপর্ব শুরু হয়৷ নির্যাতিতা বিলকিস বানো আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান যে, সিবিআই-এর জোগাড় করা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে৷ এর পর ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি মুম্বইয়ে স্থানান্তিরত করে দেয়৷ বিশেষ সিবিআই আদালত বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের গণহত্যার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দেয়।
বোম্বে হাইকোর্টও এই নির্দেশ বহাল রাখে এবং জন দোষীকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেয়। এবার বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা সময়ের আগেই ছাড়া পেলেন।