পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : কঠিন সংগ্রাম, লড়াই, অধ্যবসায়, বন্ধুর পথ যে সাফল্য এনে দিতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ কোট্টায়ামের দরিদ্র তপশিলি পরিবারের ছেলে এন কে মনোহরন। অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি চলাকালীন নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে কখনো তাঁকে অটো চালক আবার কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়েছে। সকলের কাছে আজ অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এন কে মনোহরন।
তবে মনোহরনের নিজের কথায়, এই সাফল্য তার সহজে আসেনি। একদিকে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার, সেই পরিবারের দায়িত্ব, বোনের বিয়ে সব কিছুই ছিল তাঁর কাঁধে। যখন তার বন্ধুরা সহজেই গবেষণার কাজে এগিয়ে চলেছেন, তখন তার কাছে এই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে লক্ষ্য থেকে কোনও দিন তিনি সরে আসেননি। বর্তমানে মনোহরন একটি সরকারি কলেজের ইকোনমিক্সের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হতে চলেছেন।
কোট্টায়ামের মুন্ডকায়ামের কাছে বসবাসকারী একটি দরিদ্র তপশিলি পরিবারের ছেলে ৩৬ বছর বয়সী এন কে মনোহরন। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি অর্জন করেছেন মনোহরন। চাঙ্গানাসেরি এনএসএস কলেজে অর্থনীতিতে বিএ করেন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর এবং এম ফিল করার জন্য তিনি কার্যবত্তম ক্যাম্পাসে পৌঁছেছিলেন।
এন কে মনোহরন জানান, বরাবরই ইচ্ছে ছিল সরকারি কলেজে অর্থনীতির সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করার। তবে মনোহরন জানিয়েছেন, এই পথটা সহজ ছিল না তার কাছে। আমার বন্ধুরা যখন এই পথটা সহজে পার হতে পেরেছিলেন, সেটাই ছিল আমার কাছে কঠিন।
মনোহরন জানিয়েছেন, কার্যবত্তম ক্যাম্পাসে গবেষণার সময়ও তিনি যখনই সময় পেতেন তখন তিনি অটো রিকশা চালাতেন। খুব ছোট্ট থেকেই তিনি কাজ করতে শুরু করেন। যখন তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেন, তখন থেকেই তিনি রোজগার করতে শুরু করেন। কারণ নিতান্ত দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে তাকে পেটের ভাত জোগাড় করতে হত। তাই কাজ করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। এমনকী রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজও করেন তিনি। পড়াশোনার কারণে তিনি সব সময় কাজে যেতে পারতেন না। কিন্তু যখন কার্যবত্তম ক্যাম্পাস বন্ধ থাকত তখন তিনি এই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সেই সময় তার কাঁধে ছিল তার বড় বোন মঞ্জুর বিয়ের দায়িত্ব। মনোহরনের বাবা মায়ের নাম কুঞ্জেরুকান ও আম্মিনি।
মনোহরন জানিয়েছেন, যে শুধুমাত্র তপশিলি উন্নয়ন বিভাগ দ্বারা প্রদত্ত ফেলোশিপে গবেষণা সম্পূর্ণ করা কঠিন ছিল। ফলে এই কাজগুলি তাকে বেছে নিতে হয়।
মনোহরন আরও জানিয়েছেন, আমার গবেষণার বিষয় ছিল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে তফশিলি জাতির শিশুদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা। এই গবেষণার ক্ষেত্রে আমার গাইড ছিলেন এস পি কুমার, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ, শ্রী নারায়ণ গুরু কলেজ, চেরানাল্লুর, কোঝিকোড়। আর্থিক সমস্যার কারণে এম ফিলের পর আমার শিক্ষাজীবনে ছয় বছরের ব্যবধান হয়ে যায়।
মনোহরন আরও জানিয়েছেন, আমার লক্ষ্য ছিল কলেজে অধ্যাপনা করা। বর্তমানে মনোহরন সিটু পুলিকুন্নু কংক্রিট লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
আরও পড়ুন: বিয়ের মণ্ডপে লড়াই, কনে মারছে বরকে! দেখুন সেই ভাইরাল ভিডিও
মনোহরন তার চলার পথের কথা জানিয়ে বলেছেন, অনেক কঠিন পথে পেরিয়েই তাকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। তার বন্ধুরা যখন অনেক অনায়াসেই তাদের লক্ষ্যে এগিয়েছে, তখন তিনি জীবনযুদ্ধে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেছেন।