পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অষ্টমবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। রাজ্যপাল এদিন নীতীশ কুমারকে শপথবাক্য পাঠ করান। পথচলা শুরু হল আরজেডি ও জেডইউ সরকারের। উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন লালু পুত্র তেজস্বী যাদব।
বুধবার অষ্টমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে রেকর্ড গড়লেন নীতীশ কুমার। উপমুখ্যমন্ত্রী হিসবে শপথ নিলেন লালুপুত্র তেজস্বী। বুধবার দুপুর ২টোয় পাটনায় রাজভবনে শপথ নেন নীতীশ এবং তেজস্বী। নীতীশের পরামর্শ মেনেই গঠন হবে মন্ত্রিসভা। আগামী ১৫ আগস্ট বাকি মন্ত্রিসভা গঠন হবে বলে জানা গিয়েছে। শপথ অনুষ্ঠান সাঙ্গ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর দল বিজেপিকে তীক্ষ্ণ আক্রমণ করেন নীতীশ। তিনি বলেন, ‘২০১৪-য় মোদি জিতেছেন। সেকথা ঠিক। কিন্তু ২০২৪-এ তিনি জিতবেন কি?’ নীতীশ কুমার আরও বলেন, ‘২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফলের পর আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইনি। কিন্তু আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। দলের বাকিদের জিজ্ঞাসা করুন তাঁদের কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপর তো আপনারা দেখেছেন কী হয়েছে। আমি দু’মাস আপনাদের সঙ্গে কোনও কথা পর্যন্ত বলিনি।’
সরকার ভেঙে পড়ার পর নীতীশকে কাঠগড়ায় তুলে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, নীতীশের মহাগটবন্ধন সরকার পুরো মেয়াদ টিকবে না। বিজেপি করার জন্য যে তাঁর ভোটব্যাংকে আঘাত লেগেছিল সরাসরি না বললেও সেকথা শুনিয়ে দেন তিনি। বিজেপির দাবি উড়িয়ে দিয়ে নীতীশ বলেন, ‘আমার প্রাক্তন সঙ্গীরা সেখানে পৌঁছবে, যেখানে তারা ২০১৫-এর বিধানসভা ভোটে ছিল।’
প্রত্যাশিত ভাবেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেছিল প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। নীতীশের শপথ অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিহারের প্রবীণ বিজেপি নেতা সুশীল মোদি দাবি করেছিলেন, তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। দলও আমন্ত্রণপত্র পায়নি। সুশীল বলেন, ‘নীতীশ যা করলেন, তা প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিহারের জনগণের অপমান। মানুষ এনডিএকে ভোট দিয়েছিল। নীতীশ সেই বিশ্বাস ভাঙলেন।’
নীতীশের শপথ গ্রহণের আগেই বিহারের নয়া রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে মুখ খোলেন, প্রাক্তন জেডিইউ নেতা তথা ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। এদিন তিনি জানিয়েছেন, এই গোটা ঘটনায় নীতীশ কুমারই হলেন প্রধান। পিকে বলেছেন, এই নয়া সরকার পরিচালনায় আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব যে বড় ভূমিকা রাখবে সে কথা অনস্বীকার্য।
২০২৪ -এর বিরোধী রাজনৈতিক দলের মুখ হিসাবে কি নীতীশকে সামনে আনা হবে ? তিনি কি বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুখ হতে পারেন ? এর জবাবে পিকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিকাশ সে রাজ্যের কথা মাথায় রেখেই হয়েছে। আমি মনে করি না দেশে জাতীয় স্তরে একটি বিকল্প বিরোধী দল তৈরি করার চিন্তাভাবনা নিয়ে এটি করা হয়েছে।’ পিকে আরও বলেন, ২০১৫ সালের মহাজোট ও ২০২২ সালের এই জোটের মধ্যে ফারাক রয়েছে। সেই সময় জোট হয়েছিল রাজনৈতিক স্বার্থে। ২০২২ সালে তা তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক স্বার্থে। এছাড়াও তাঁর দাবি , ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নীতীশ কুমারকে দেখে মনে হয়েছে যেন তিনি জোর করে বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। প্রশান্ত কিশোর বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে বিহারে ছ’বার সরকার গড়ার চেষ্টা করেছেন নীতীশ কুমার। এখান থেকেই স্পষ্ট, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উচ্চাকাঙ্খা পূরণের জন্য একটা রাজ্যে তিনি কতখানি রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি করতে পারেন ।’
বিহারে বর্তমানে একক বৃহত্তম দলের নেতা হলেন তেজস্বী যাদব। স্বাভাবিক কারণেই তিনি বেশি সংখ্যায় মন্ত্রী চাইলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে শোনা যাচ্ছে নীতীশ নিজে নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ছাড়বেন না। তিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান পুলিশ। অন্যদিকে সংখ্যালঘু , দলিত , আদিবাসী উন্নয়নের মত দফতরও তিনি নিজের হাতে রাখতে পারেন। আজ নীতীশের ভোটব্যাংকের একটা বড় অংশ দলিত,সংখ্যালঘু ও আদিবাসী। ৭১ বছরের নীতীশের সামনে এখন কাজ দুটি। প্রথমত আরজেডিকে সামলানো। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর হাতে এখন হ্যারিকেন। অন্যদিকে নিজেদের দলের কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করা। কোথাকার জল কোথায় দাঁড়ায় তা বলবে ভবিষ্যৎ।