বিশেষ প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-কে ভুল প্রমাণ করে কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘু কল্যাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ কমিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এক লিখিত প্রত্যুত্তরে ইরানি মন্তব্য করেছেন, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু-কেন্দ্রিক প্রোগ্রামের জন্য বরাদ্দ অর্থ কমিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের চালু করা নানা প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের সংখ্যাও যথারীতি ২০১৯-২০ সাল থেকে হ্রাস পেয়েছে।
ইরানি উল্লেখ করেছেন, উক্ত সময়কালে কিছু প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থ ঢালা হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়েছে অল্প সংখ্যক মানুষের। সংখ্যালঘু কল্যাণের বিষয় নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন অসমের আঞ্চলিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত দিকে ক্ষমতায়নের জন্য চালু করা জাতীয় প্রোগ্রামে কত ফান্ড বরাদ্দ করা হয়েছে, কারা সেই অর্থ পেয়েছে, কত সংখ্যক মানুষ লাভবান হয়েছে। কেন্দ্রের তালিকায় ৬টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রয়েছে। এগুলি যথাক্রমে মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও জৈন। আজমলের সওয়ালের উত্তরে ইরানি বলেন,’ফিজিক্যাল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যাচিভমেন্ট ফর ভেরিয়াস ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক নথি থেকে জানা যাচ্ছে, গত তিন বছরে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। ইরানি আরও জানিয়েছেন, ২০২২-২০২৩ বর্ষে পাঁচটি এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামকে (শিখো আওর কামাও, উস্তাদ, হামারি ধারোহার, নই রশনি ও নই মঞ্জিল) একত্র করে প্রধানমন্ত্রী বিরাসত কা সম্বর্ধান (পিএম বিকাশ) নাম দেওয়া হবে।
‘নই মঞ্জিল’ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের সংখ্যা নাটকীয় ভাবে নিচে নেমে গিয়েছে। ২০১৯-২০ সালে এই প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন ২২৩৫৯ জন, আর ২০২১-২০২২ সালে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩১২ জনে। এমন বহু প্রকল্প রয়েছে যেখানে সুবিধাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বরাদ্দ অর্থ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রোগ্রামের কথাই ধরা যাক। এই স্কলারশিপ সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা নবম শ্রেণি থেকে ডক্টরাল স্তর পর্যন্ত পেয়ে থাকে। ২০১৯-২০২০ সালে এই প্রোগ্রামের জন্য অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল ১৪২৪.৫৬ কোটি টাকা, কিন্তু ২০২১-২০২২ সালে তাতে কোপ পড়ে। বরাদ্দ করা হয় ১৩২৯.১৭ কোটি টাকা। এদিকে প্রাপকদের সংখ্যা ৫৫.৬৮ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭.১০ লক্ষ। অসংখ্য প্রশিক্ষণমূলক ও স্কলারশিপ প্রকল্পে ফান্ডের পরিমাণ অল্প করে দেওয়া হয়েছে। সেই মতো সুবিধাভোগীদের সংখ্যাও পড়তির দিকে। ২০১৯-২০ সালে পোস্ট-ম্যাট্রিকুলেটরি প্রোগ্রামের আওতায় স্কলারশিপ পেয়েছিলেন ৭.৪৩ লক্ষ পড়ুয়া, কিন্তু ২০২১-২০২২ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৭.১৪ লক্ষে। এই স্কলারশিপের জন্য খরচ করা অর্থের পরিমাণও কমেছে।
আগে দেওয়া হয়েছিল ৪৮২.৬৫ কোটি টাকা, তবে ২০২১-২২ বর্ষে এর পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৪৬৫.৭৩ কোটি টাকা। একই রকম আর্থিক কোপের মুখে পড়েছে মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ স্কিমও। ২০১৯-২০ সালে এই ফেলোশিপ পেয়েছেন ১২৫১ জন পড়ুয়া আর ২০২১-২২ সালে এর প্রাপক সংখ্যা ১০৭৫ জন। এই ফেলোশিপের জন্য বরাদ্দ অর্থ ১০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৭৪ কোটি টাকা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘নয়া সবেরা’ ফেলোশিপ প্রাপকদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো হ্রাস পেয়েছে। বেগম হজরত মহল ন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। গত দুই বছরে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ১৬৫.২০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৯১.৬০ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সংখ্যাও ২.৯৫ লক্ষ থেকে কমে ১.৬৫ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে চলতি শিক্ষাবর্ষে। যে সকল সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা ইউপিএসসি, এসএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁদের জন্য রয়েছে ‘নই উড়ান’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের ফান্ডেও হাত পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। কমানো হয়েছে আর্থিক বরাদ্দ, ফলে প্রাপকদের সংখ্যাও তলানিতে ঠেকেছে।