পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গোটা বিশ্বজুড়ে থাবা বসাচ্ছে একের পর এক ভাইরাসের আতঙ্ক। বিগত দুবছর ধরে করোনা অতিমারি তার দাপট দেখিয়েছে। এই আতঙ্ক থেকে এখনও পরিত্রাণ পায়নি মানুষ। এবার করোনা আবহের মধ্যেই ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে মাঙ্কি পক্স ভাইরাস। সেই ভয়ের বাতাবরণের মধ্যেই হানা মারবার্গ ভাইরাসের।
এই ভাইরাসের উপস্থিতি ইতিমধ্যেই টের পাওয়া গেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশে। ঘানার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে গত ১৮ জুলাই এই ভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানানো হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের কথায়, মারবার্গ ভাইরাসটি ইবোলার মতোই অত্যন্ত সংক্রমক। ঘানাতেই মারবার্গ ভাইরাসটির প্রথম প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ১০ জুলাইয়ের প্রথম দিকে দুজনের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। দুই রোগীর মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, বমি বমি ভাব সহ নানা উপসর্গ দেখা যায়। পরবর্তীতে মৃত্যু হয় দুজনের। তবে ঘানার এই রিপোর্ট সঠিক কিনা তা যাচাই করতে বিশ্ব স্বাস্থ্যের সংস্থা (‘হু’), পশ্চিম আফ্রিকার আরেকটি দেশ সেনেগালের বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে। দুই রোগীর প্রত্যেকের নমুনা ডাকার ইনস্টিটিউট পাস্তুরে পাঠানো হয়েছিল। ‘হু’-এর মতে, সেনেগালের পরীক্ষাগার নোগুচি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চও জানায় ফলাফল সঠিক। দুই রোগীই মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
জানা যায়, ১৯৬৭ সালে পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বহু মানুষ। এই ভাইরাস প্রাণ কেড়েছিল অনেকের। ফের ২০২২ সালে মিলল মারবার্গে আক্রান্ত রোগীর হদিশ। এই ভাইরাস ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে ছড়িয়ে ছিল। তারপর সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। মারবার্গ ভাইরাসের হদিশ ঘানার আগে গিনিতে পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর আগস্ট মাসে এই মারবার্গ ভাইরাসে একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিল বলে খবর। পরবর্তীতে অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উগান্ডায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলাতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণে।
মারবার্গ ভাইরাস রোগের উপসর্গ কী
মাত্রাতিরিক্ত জ্বর ও মাথাব্যথা হল এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। সেই সঙ্গে পেশির ব্যথা অনুভূত হয়। দেখা দিতে পারে গুরুতর ডায়ারিয়ার সমস্যা। শরীরে দেখা দেয় পেট ব্যথা ও ক্র্যাম্প। সংক্রামিত ব্যক্তির বমি বমি ভাব হতে পারে। নাক, মাড়ি এমনকী যোনি দিয়ে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা।
মারবার্গ ভাইরাস ডিজিজ একটা সময় ‘হেমোরেজিক ফিভার’ নামে পরিচিত ছিল। ৮৮ শতাংশ মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তবে ঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। এখনও পর্যন্ত মারবার্গ ভাইরাসের জন্য কোনও অনুমোদিত ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, আক্রান্ত রোগীকে মুখে বা শিরায় স্যালাইন দিয়ে এবং লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা যেতে পারে।
মারবার্গ ভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রামিত হয় বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালে উগান্ডা ভ্রমণরত দুই পর্যটক মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সংক্রামিত বাদুড়ের মলের ছোঁয়া থেকেই দুজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল বা রক্ত বা রক্তমাখা জিনিসের সংযোগ থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের তরল যেমন রক্ত, প্রস্রাব, লালা, ঘাম, মল, বমি, বুকের দুধ, অ্যামনিওটিক তরল এবং মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত বা মারা যাওয়া ব্যক্তির বীর্যের মাধ্যমে ভাইরাস সরাসরি দেহে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষত থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহৃত দূষিত বস্তু যেমন কাপড়, বিছানা, সূঁচ, চিকিৎসার সরঞ্জামের মাধ্যমেও ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার সময়ে একজন চিকিৎসককে নিজের জন্য সঠিক সুরক্ষাবিধি মেনেই চিকিৎসা করতে হবে।
ঘানার স্বাস্থ্য বিভাগ জনসাধারণকে বাদুড়ের বিচরণ এলাকা এড়িয়ে চলতে এবং ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমাতে সব ধরনের মাংসজাতীয় খাবার ভালোভাবে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকায় দ্বিতীয়বারের মতো এই মারবার্গ ভাইরাস শনাক্ত হল। গিনিতে গত বছর একজন শনাক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু শনাক্তের পাঁচ সপ্তাহ পর সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।