বিশেষ প্রতিবেদকঃ ফের গরিব মানুষদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল অসমের বিজেপি সরকার। বেআইনি দখল উচ্ছেদের নাম করে গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের কোনওরকম পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে ২০টি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হল ৯০টি পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই। এবারও বুলডোজারের নিশানা সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি বিধানসভার তেজপুর ও ইছারপার গ্রাম।
উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিনই সার্কেল প্রশাসনের তরফ থেকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৯০টি কাঁচা-পাকা বাড়ি। গোটা এলাকার জনমনে এখন হাহাকার পরিস্থিতি। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে আষাঢ় মাসের কাঠফাটা তাপের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় কয়েক হাজার খেটে খাওযা মানুষের জীবন বিপন্ন। প্রশাসনের বুলডোজার চলাকালে এক বৃদ্ধা তাঁর নাতি-নাতনি দু’টি দুধের শিশুকে বুকে আগলে রেখে কান্না ভেজা গলায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বারবার দৌড়ঝাঁপ করেও সরকারি ঘর জোটেনি। নিজের জীবনের শেষ প্রান্তে এখন সরকার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিল।
সোমবার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা আগেই পাথারকান্দি ইছাবিল এটিসি চা বাগানের প্রায় বারোশো বিঘা সরকারি খাসভূমি জবরদখল মুক্ত করতে রবিবার সকাল থেকে সারাদিন চলল প্রশাসনের বুলডোজার। ৯০টি বাড়ি ভেঙে ফেলায় মাথার উপর ছাদ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে হয়েছে ভূমিহীন পরিবারগুলিকে। চোখের সামনে বাসস্থান গুঁড়িয়ে ফেলতে দেখে অনেকেই মুর্ছা যান। আবাল বৃদ্ধা বনিতার কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। সেসবকে তোয়াক্কা না করে বিশাল আধা সামরিক বাহিনী সহ বর্জ্য এবং সেফগার্ড হাতে নিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান সার্কেল অফিসার অর্পিতা দত্ত মজুমদারের নেতৃত্বে ২০টি বুলডোজার ও পে লোডার মেশিন।
ভূমিহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে নির্মম উচ্ছেদ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, বিজেপি সরকারের ‘সব কা বিকাশ’ মন্ত্র ভুলে এখন হিটলারি শাসন চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সবচাইতে মারাত্মক ব্যাপার হল, যাদের বাড়িঘর প্রশাসন ভেঙে ফেলেছে তাদের অনেকের কাছেই জমির নথিপত্র রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তারা সেই সবকেও তোয়াক্কা করেননি।
তাছাড়া নোটিশে নির্ধারিত সময়ের ৩৬ ঘণ্টা আগেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় অনেক পরিবারই ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে নেওয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে উচ্ছেদের সময় শেষ হয়েছে অনেকের সারা জীবনের সম্বল। প্রশাসন জানাচ্ছে, এইভাবে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।