পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ অসম সরকার ২০২০ সালের অসম রিপিলিং আইনের মাধ্যমে রাজ্যের প্রাদেশিক মাদ্রাসাগুলিকে নিয়মিত সরকারি স্কুলে পরিণত করেছিল। অসম সরকারের এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা হয় গুয়াহাটি হাইকোর্টে। কিন্তু হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দিয়ে অসম সরকারের আদেশ বহাল রাখে। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতে এই আপিল মামলা দায়ের করেছেন জনৈক মুহাম্মদ ইমামুদ্দিন ভুঁইয়া। তাঁর আবেদনে তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ভুল।
হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছিল, রাজ্যের মাদ্রাসাগুলি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে চলে। তাই সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে সংবিধানের ২৮(১) ধারার উলঙ্ঘন হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে ২০২০ সালের রিপিলিং আইনের অন্তর্গত রাজ্য সরকারের ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির নির্দেশে ১৯৫৪ সালে গঠিত অসম রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটি সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার। ২০২০ সালের রিপিলিং আইনের দ্বারা দু’টি আইন বাতিল করা হয়েছে। এক অসম মাদ্রাসা এডুকেশন প্রভিন্সিয়ালাইজেশন আইন ১৯৯৫ এবং দ্বিতীয় হল অসম মাদ্রাসা এডুকেশন আইন ২০১৮। আবেদনকারী হাইকোর্টে তাদের আবেদন বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আইনের মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে সংবিধানের ১৪, ২১, ২৫, ২৬, ২৯ এবং ৩০নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি ভঙ্গ করা হয়েছে। হাইকোর্ট তাদের গত ৪ ফেব্রুয়ারির রায়ে বলেছিল সংখ্যালঘুরা সরকারি মদতপুষ্ট মাদ্রাসাগুলি পরিচালন করলেও সেগুলিকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে মেনে নেওয়া যায় না। হাইকোর্ট আরও বলেছিল, সংখ্যালঘুরা নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তেই পারেন। কিন্তু যে মুহূর্তে সরকারের টাকা সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে শুরু করছে, তখন থেকে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যায় না। সেই সব মাদ্রাসায় শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী যেহেতু সরকারি কর্মী, তাই সেগুলিকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। সুপ্রিম কোর্টের আপিলের আবেদনে বলা হয়েছে, মাদ্রাসাগুলির ব্যক্তিগত অধিকারে অযথা হস্তক্ষেপ করছে সরকার। মাদ্রাসার জমি-ভবন-বিদ্যুৎ এবং ফার্নিচারের খরচ সবই মাদ্রাসার। সরকার মাদ্রাসাগুলির সম্পত্তির অধিকারে নাক গলাচ্ছে। মাদ্রাসাগুলিতে পর্যাপ্ত অনুদান না দিয়ে সরকার কীভাবে মালিকানা দাবি করতে পারে?
কীভাবেই বা মাদ্রাসাগুলিকে সরকার ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত করতে পারে? সুপ্রিম কোর্টের আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারের মাদ্রাসায় এই অযাচিত হস্তক্ষেপ ভারতের সংবিধানের ৩০(১এ) ধারার পরিপন্থী। তাই আমাদের মাদ্রাসাকে মাদ্রাসা হিসেবেই চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক।
প্রসঙ্গত, অসমে যে মাদ্রাসাগুলি পর্যায়ক্রমে সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। তার সবগুলিই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মুসলিমদের উদ্যোগ, পরিশ্রম ও সংগৃহীত চাঁদার অর্থে। জমি সংগ্রহ থেকে ভবন নির্মাণ, সবটাই মুসলিমদের দান। সরকার অধিগ্রহণ করার পর কেবলমাত্র শিক্ষক ও কর্মীদের বেতনটাই প্রদান করত। এছাড়া অতীতে এই মাদ্রাসাগুলিই একদিকে যেমন স্বাক্ষরতার প্রসার ঘটিয়েছে, তেমনি সমাজকে শিক্ষার আলো দেখিয়েছে। অসমে বিশিষ্ট আলেম হোসেন আহমেদ মাদানী এবং বিশিষ্ট মুসলিম নেতা আবদুল মোত্তালের মজুমদার প্রাক স্বাধীনতাকালে বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসা গড়তে সহায়তা দিয়েছিলেন। এই মাদ্রাসাগুলির স্বাধীনতা আন্দোলনে কম ভূমিকা ছিল না।
উল্লেখ্য, দেশ বিভাগের সময় করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি সিলেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানে সামিল হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন সদ্যপ্রয়াত আইনজীবী আবদুল মুহিব মজুমদারের পিতা আবদুল মোত্তালের মজুমদার এবং হোসেন আহমেদ মাদানীরা। তাঁরা এই অঞ্চলটি অসমের মধ্যে থেকে ভারতে থাকার পক্ষেই জোরালো ভূমিকা নিয়েছিলেন।