পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভালোবাসার কোনও ধর্ম হয় হয় না। অন্তরের আকূলতাই পরিণতি পায় ভালোবাসায়। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে কম সিনেমা হয়নি। ২০০৪ সালে যশ চোপড়া পরিচালিতর ‘বীর-জারা’ মুক্তি পায়। স্কোয়াড্রন লিডার বীর প্রতাপ সিংকে ভালোবেসে ফেলেন জারা হায়াত খান। তার পর দুজনের জীবনে কিভাবে অন্ধকার নেমে আসে তা কারুর অজানা নয়। ২০০৯ সালে অক্ষয় খান্না ও সোনালি বেন্দ্রে অভিনীত ‘দহেক’ সিনেমায় সেই একই কাহিনি দেখা যায়। হিন্দু-মুসলিম বিয়ের অপরাধে তাদের ওপর নেমে আসে পরিবারের আক্রোশ।
১৯৯৫ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয় মণিরন্তম পরিচালিত ‘বোম্বে’ সিনেমা। সেখানেও ভিন্নধর্মী বিয়েতে দুই পরিবারের অসম্মতি সামনে আসে। এছাড়াও একই প্রেক্ষাপটে ভিন্নধর্মী বিয়ের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে বহু সিনেমা তৈরি হয়েছে।
এবার রূপোলী পর্দা ছেড়ে বাস্তবে ঘটল এই ঘটনা। যার শিকার হলেন এক নব-দম্পতি। ভালোবেসে বিয়ে করার অপরাধে, অপরাধী হলেন মধ্যপ্রদেশের যুবক আসিফ খান ও সাক্ষী সাহু।
আসিফের পরিবারের ওপরে নেমে এল সমাজের রক্তচক্ষু। এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে আসিফের বাড়ি, দোকান সব ভেঙে দেওয়া হল। মধ্যপ্রদেশের দিন্দোরি জেলার ঘটনা। আসিফ খান ও সাক্ষী সাহু পালিয়ে গিয়ে দুজনে বিয়ে করেন গত ৭ এপ্রিল। এর পরেই সমাজের মাতব্বরদের রক্তচক্ষু গর্জে ওঠে। ভেঙে দেওয়া হয় আসিফ খানের বাড়ি ও দোকান। অবৈধ নির্মাণের সাফাই গেয়ে আসিফ খানের তিনটি দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে আসিফ, সাক্ষীকে পাশে নিয়ে জানিয়েছেন, ভালোবাসাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। মন্দিরে বিয়ে সাড়ার পরেই সাক্ষীর পরিবার আসিফের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে।
৭ এপ্রিল বিয়ের পরেই জেলার কালেকটর রত্নাকর ঝাঁ -এর নেতৃত্বে আসিফ খানের বাড়ি ও তিনটি দোকান সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
আসিফের অসহায় বাবার প্রশ্ন, এবার কি হবে আমাদের? কোথায় যাব আমরা? আমাদের ছেলে-মেয়েদের কি হবে? কিভাবে বাঁচব আমরা?
আসিফের প্রশ্ন একজন মুসলিম হয়ে মন্দিরে বিয়ে করাই কি ছিল আমার অপরাধ? আমি যদি কোনও দোষ করে থাকি তবে আমার পরিবারকে কেন এই শাস্তি পেতে হচ্ছে?
সাক্ষী জানিয়েছেন, তার পরিবারের ভিন্নধর্মী বিয়েতে অমত ছিল। তবে আমি কি ভুল করেছি? আমি একটি মানুষকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি, আমার অপরাধ কোথায়? আমি কি আমার পছন্দমতো স্বামী বেছে নিতে পারি না? যখন আমি আসিফকে বিয়ে করব বলে বাড়িতে জানাই আমার মা মুসলিম আপত্তি জানায়, ভাই হুমকি দেয়।
এর পরেই সাক্ষী ও আসিফ দুজনে বাড়ি থেকে পালিয়ে একটি মন্দিরে বিয়ে করেন। আর তার পরেই সমাজের রক্তচক্ষু নেমে আসে দুজনের ওপরে।
আসিফের বাবা জানান, দিন্দোরি জেলার কালেক্টরের অফিস থেকে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ তুলে ছেলের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। আসিফের বাবার দাবি, এগুলো অবৈধ নির্মাণ ছিল না।
এদিকে সাক্ষীর পরিবার জানিয়েছে, আসিফের দোকান, বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় তারা কোনওভাবেই যুক্ত নয়। সাক্ষী তাদের একমাত্র কন্যা। আমরা শুধু আমাদের মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। সে মুসলিম বাড়িতে বিয়ে করতে পারে না।
সাক্ষীর অভিযোগ, তারা নতুন সংসার শুরু করার আগেই তার শ্বশুরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হল। ভালোবেসে কোনও মানুষকে বিয়ে করা কোনও অপরাধ নয়, কিন্তু একশ্রেণির মানুষ এটাকে অপরাধ বলে মনে করে। আমি যা করেছি, তার জন্য আমি নিজের কাছে গর্বিত, কারণ আমি জানি আমি কোনও ভুল করিনি।
মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট ওই দম্পতিকে সুরক্ষা সহ সাহুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে দম্পতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে সাক্ষী সাহু ও আসিফ খান দুজনেই আত্মগোপন করে রয়েছেন।