পুবের কলম প্রতিবেদক : রোযার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকারের কাছে। উত্তরে তিনি জানালেন, ছোট বেলা থেকেই পবিত্র রমযান মাসে মুসলিম ভাই-বন্ধুদের সারাদিন ধরে, সূর্য উদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্ত অবধি রোযা রাখতে দেখে আসছি। কত বিরাট সংযম, কতবড় ত্যাগ স্বীকার। আবার সমানভাবে স্ব-ইচ্ছায় কষ্ট স্বীকারও বলা যেতে পারে। আর তখন অবাক হয়ে যেতাম। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী বা অন্য বর্ষের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের দেখেছি গোটা রমযান মাসজুড়ে রোযা রাখতে। সারাদিন না খেয়ে এমনকী এক ফোটা জলও মুখেও না নিয়ে কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছে দেখে অবাক হয়েছি। পরবর্তীতে আরও জেনেছি, রমযান শুধুমাত্র আহার-পানীয় বর্জন করে রোযা বা উপবাসে থাকা নয়। যে পবিত্র মাসে মহাগ্রন্থ কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছিল অর্থাৎ অবতীর্ণ হয়েছিল, সেই মাসটা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এই মাসে রোযা রেখে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর স্মরণাপন্ন হলে তাঁর অনুগ্রহ লাভ আরও সহজ হয়ে যায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুসলিম ভাই-বোনেরা একমাস ধরে যে কঠোর সংযমের মাধ্যমে সিয়াম সাধনা করেন, অর্থাৎ রোযা পালন করেন, তা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে যাই। পবিত্র এই মাস সংযমের বড় রকমের উদ্যাপন যেন। এমন সংযম চর্চা অন্য কোনও ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। এক মাস ধরে এমন মহান ব্রত পালন করার মধ্যে বেশ বড় অনুভূতির ছোঁয়া রয়েছে বলেই আমার মনে হয়। এছাড়া আর একটি বিষয় আমাকে আকর্ষণ করে, তা হল, ইফতার। রোযা ভাঙার সময় ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত পেটে খাবার সাজিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আজানের শব্দ শোনার অপেক্ষা। আর একসঙ্গে অনেকে মিলে ভাগ করে খাবার খেতে দেখলেও মন ভরে যায়। বহু ইফতার মজলিসে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কোনও ধর্মের গণ্ডি থাকে না। চেনা, অচেনা, হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকেদের সঙ্গে ইফতার ভাগ করে খাচ্ছেন মুসলিমরা। সুতরাং রমযান সম্প্রীতিরও বার্তা বয়ে আনে বলেই আমার মনে হয়।