মুহাম্মদ মুস্তাক আলি– জঙ্গিপুরঃ মঙ্গলবার দিন মাহে রমযানের তিনটি রোযা সম্পন্ন হয়েছে। আর রোযার তৃতীয় দিনে আরও ফলের বাজারে অগ্নিমূল্যের অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর– দিন সাতেক আগেও বাজারে এক কেজি শশার দাম ১২-১৪ টাকাতে ঘোরফেরা করছিল। সেই শশা রোযার প্রথম দিনেই ৬০-৭০ টাকা কেজিতে কিনতে বাধ্য হয়েছেন ক্রেতারা। রঘুনাথগঞ্জ– ফরাক্কা– সুতি– সামশেরগঞ্জ– খড়গ্রাম– লালগোলা– জলসি– কান্দি– মুর্শিদাবাদের সর্বত্র প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে শশা। কেন বাড়ল– তারা বাড়ালো– এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ কি এমন শত প্রশ্নের উত্তর মিলছে না কোথাও। কেবল শশা নয়– দাম কয়েক গুণ বেড়েছে সব ধরনের ফলেরই বলে খবর পাওযা গিয়েছে। এক কেজি কলা ৪০-৬০ টাকা কেজিতে বিকোচ্ছে। ফলের মূল্যবৃদ্ধির তালে তাল মিলিয়ে বেড়েছে খেজুরের দাম। বাজারে এক কেজি মাঝারি মানের খেজুরের দাম। বাজারে এক কেজি মাঝারি মানের খেজুরের দাম ৪০০ টাকা। ভালো মানের আরিবয়ান খেজুর কিনতে হলে গুণতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা কেজি। সারাদিন নিরম্বু উপবাসের শেষে মাগরিবের আজানের মুহূর্তে মোমেনরা করেন ইফতার। অর্থাৎ রোযা ভঙ্গ করেন। ইফতারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে সরবত পান। এই সরবর বানাতে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান চিনি এবং কাগজি লেবু। চিনির দাম এখন কেজি প্রতি ৪২-৪৩ টাকা। একইভাবে এক জোড়া কাগজি বা পাতিলেবুর দাম গুণতে হচ্ছে প্রতি জোড়াতে ১৫ টাকা। মরশুমের শুরুতে এই কাগজি লেবুর মূল্যবৃদ্ধি এ পর্যন্ত সর্বকালীন রেকর্ড ছড়িয়েছে বলে বাজার সূত্রে খবর। ক্রেতাদের বক্তব্য মাস খানেক আগেও দশ টাকাতে ৬-৭ টা কাগজি লেবু কিনতে খরচ করতে হতো। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক পিস কাগজি লেবু কিনতে দশ টাকা গুণে দিতে হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির মাঝে সবচেয়ে বিপজ্জনক খবর বাজারে কালো বাজারিরা কৃত্তিম ঘাটতির সৃষ্টি করছে বলে বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযোগ উঠেছে। চৈত্র মাসে তরমুজের পর্যাপ্ত আমদানি হয়। আঙুরও এই সময় সুলভ মূল্যে মেনে। রোযা শুরু হতেই এই ফলগুলি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় যেন মেতে উঠেছে। বাজারে একটা মাঝারি মাপের তরমুজের দাম এখন ১০০-১২০ টাকা পড়ছে। আঙুরের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বলে জানা গিয়েছে। কাঁচা বাদাম– মটর– বরবটি– কাবলি ছোলা ও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গিয়েছে।
কালোবাজারি– ফল এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে বিভিন্ন স্তর থেকে। লালগোলা বিধানসভার বিধায়ক এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন এবং মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের গোচরে এনেছেন বলে জানা গিযেছে। মুহাম্মদ আলির বক্তব্য– লালগোলা বাজারে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু ফলের মূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম পড়ানোর যায়নি। ওয়েল ফেয়ার পার্টির পক্ষ থেকেও রোযার মাসে কৃত্রিম ঘাটতির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধিতে সরকার হস্তক্ষেপেরও দাবি উঠেছে। অন্যদিকে জেলা বাগান উদ্যান এবং কৃষি দফতর সূত্রে খবর– উৎপাদনে তেমন কোনও ঘাটতির খবর নেই। কিন্তু উৎপাদনে যেখানে কোনও ঘাটতি নেই– ঠিক তখন রোযার মুখে কৃত্তিম ঘাটতি সে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলের বেলাগাম দাম নির্ধারণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? অত্যন্ত ন্যায় এবং সঙ্গত এই প্রশ্নের কিন্তু উত্তর এখনও মিলছে না। রোযার মাসে আদৌ মিলবে কি না সেটার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে।