পুবের কলম প্রতিবেদক– ইসলামপুর কোথাও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কোথাও যে ক’জন রয়েছেন– তাঁদের অনেকে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। অনেকেই আবার অবসর নিয়েছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে টানা দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে স্কুলের পাশাপাশি মাদ্রাসার দরজা খোলার পরে এমনই ছবি উঠে এসেছে উত্তর দিনাজপুরের গ্রামীণ এলাকায়।
করণদিঘি থানার কান্তিরপার সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রী– শিক্ষক মাত্র ৮ জন। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক বলেন– ‘স্কুলে বাংলা– বিজ্ঞান– ইতিহাস এবং ভুগোল সহ প্রায় সব কটি বিষয়ের শিক্ষক সংকট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস কেমন করে নেওয়া হবে– তা ভেবেই কুল করতে পারছি না। কিভাবে মাদ্রাসা চালাব তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। বিষয়টি |র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি হাজী আবদুল কাদেরও। তিনি বলেন– সম্প্রতি জেলায় এসেছিলেন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতাজ সংঘমিতা। প্রশাসনিক বৈঠকে কান্তিরপার মাদ্রাসা সহ জেলার মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক সংকটের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। দাবি করেছেন শিক্ষক নিয়োগের।
শিক্ষক সংকটে ভুগছে করণদিঘির বুধরা উমেদিয়া হাই মাদ্রাসাও। ওই মাদ্রাসায় প্রায় ১৪০০ ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষক মাত্র তিনজন। কিছুদিন আগে ওই মাদ্রাসার দুইজন শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলছেন– পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় মাদ্রাসা চালাতে সমস্যা হচ্ছে। সব ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চাকুলিয়ার দারুল উলুম হাইমাদ্রাসার অবস্থাও প্রায় একই রকম। একই ছবি চোপড়ার মদনগছ সিনিয়ার হাইমাদ্রাসারও।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর– উত্তর দিনাজপুরে সিনিয়ার– হাই এবং জুনিয়ার হাইমাদ্রাসা মিলে মোট ২৯ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এরমধ্যে ৮ টি জুনিয়র হাই মাদ্রাসা। এরমধ্যে ২টি মাদ্রাসা চললেও ছয়টি মাদ্রাসা জমি জটে চালু হয়নি। প্রায় বেশিরভাগ মাদ্রাসা শিক্ষক সংকটে ভুগছে।
প্রত্যন্ত এলাকাতেই এই সমস্যা সব থেকে বেশি। এলাকার অনেক শিক্ষক গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরমুখী হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যন্ত গ্রামের পুরনো হাই মাদ্রাসার বদলে শহরের বাড়ির কাছাকাছি মাদ্রাসায় বদলি নিয়ে নিচ্ছেন বলে মাদ্রাসার শিক্ষকদেরই একাংশের দাবি। শিক্ষকদের বড় একটা অংশের দাবি– এর ফলে গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা বড় ধাক্কা খাবে।
করণদিঘির রহটপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শাহিদুর রহমান বলছেন– দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন– নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না হলে গ্রামীণ এলাকার মাদ্রাসাগুলো চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গাঁ-গঞ্জে ছাত্রছাত্রীরা নির্ভর করে ওই মাদ্রাসার উপরেই। তাছাড়া বরাবর মাধ্যমিক মানের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির আগ্রহও রয়েছে। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের একাংশের দাবি– মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাছে বারবার লিখিত আবেদন জানিয়েছি– দ্রত শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি বদলি নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হোক– যাতে মাদ্রাসা বিপাকে না পড়ে।
গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন– কোনও মাদ্রাসায় যদি এমন সমস্যা হয়ে থাকে আমাদের জানালে তাদের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয় সেই বিষয়টি আমরা দেখব।
তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির উত্তর দিনাজপুর সভাপতি মুহাম্মদ সাকির আলম বলেন– পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় জেলার মাদ্রাসাগুলি সঙ্কটে– গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।