পুবের কলম প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহের তীব্র ঘাটতি এবং আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে শ্রীলঙ্কার মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে অবৈধভাবে। তামিলনাডুতে আশ্রয় নিচ্ছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। গত মঙ্গলবার, ১৬ জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক দুটি ধাপে তামিলনাডুতে এসে পৌঁছেছেন। এরা প্রতেক্যেই শ্রীলঙ্কার উত্তরে জাফনা এবং মান্নার অঞ্চলের তামিল সম্প্রদায়ের মানুষ । তিন শিশুসহ ছয় শরণার্থী রামেশ্বরমের উপকূলে একটি দ্বীপের কাছে আটকা পড়েছিল, ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে। দশজনের দ্বিতীয় দলটি গভীর রাতে তামিলনাডুতে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সী গজেন্দ্রন, যিনি জাফনায় একজন চিত্রশিল্পী হিসাবে কাজ করতেন। গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং বর্তমানে তিনি তামিলনাডুতে একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন।
তামিলনাডু পুলিশের সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বেকারত্ব এবং খাদ্যের অভাব থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়েছেন শরণার্থীরা।
অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সী শিবরাথিনাম পেশায় একজন জেলে। ভাভুনিয়া থেকে ধানুশকোডি পৌঁছেছেন এমন ১০ জনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। সোমবার সকালে তিনি যাত্রা শুরু করেন বলে জানান।সঙ্গে স্ত্রী, বোন, শ্যালক এবং তাদের তিন সন্তানও মাছ ধরার নৌকায় ভারতে পৌঁছেছে। তার কথায়,আমরা সমুদ্রযাত্রা শুরু করার প্রায় দুই ঘন্টা পরে, সমুদ্রের মাঝখানে আমাদের নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়,এরপর প্রায় ৩৭ ঘন্টা ধরে খাবার বা জল ছাড়াই থাকি। অনেক চেষ্টার পর ইঞ্জিন ঠিক করে মঙ্গলবার গভীর রাতে ধানুশকোডি পৌঁছান তারা। কিন্তু ভারতে পৌঁছালে, তামিলনাডু মেরিন পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে হেফাজতে নিয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে অবৈধ প্রবেশ সংক্রান্ত মামলা নথিভুক্ত করে। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা বলছেন কোনো অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে তারা তাদের টহল জোরদার করেছে। আগামীদিনে শ্রীলঙ্কার উত্তর তামিল,অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি থেকে আরো মানুষ ভারতে চলে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন তারা শরণার্থী হিসেবে শ্রীলঙ্কানদের ভারতে আসা বন্ধ করতে একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এদিকে নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ইন্ডিকা ডি সিলভা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন শরণার্থীদের ভারতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও এটি ১০০ শতাংশ কার্যকর হবে না, তবে তারা সফলভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড লকডাউনের সময়, শ্রীলঙ্কার প্রধান শিল্প চা, টেক্সটাইল এবং পর্যটন ক্ষতির মুখে পড়েছিল। এরপর স্থিতিশীল আয়ের উৎস না থাকায় এই দ্বীপদেশটি ধীরে ধীরে আর্থিক সংকটে পড়ে। একই সময়ে, এর ফরেক্স, যা এর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ছিল, তাও ক্রমাগত পতন হয়। আর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও ঐতিহাসিকভাবে ব্যয়বহুল হয়। রান্নার গ্যাসের অভাবে হোটেলগুলি বন্ধ হয়ে যায় কারণ রাজ্যের প্রধান গ্যাস সরবরাহকারীদের গ্যাস কেনার জন্য কোনও টাকা ছিল না। লোকেরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য দোকানের সামনে সারিবদ্ধ হতে শুরু করে এবং প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মাঝে মাঝে এই জাতীয় জিনিসগুলির জন্য হিংসাত্মক সংঘর্ষও হয়।