পুবের কলম প্রতিবেদক : এই মার্চ মাসেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি পান বুশরা মাতিন। একইসঙ্গে ১৬টি স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি। বুশরা কর্নাটকের রাইচুরের বাসিন্দা। ১০ মার্চ বেলগাভী প্রেক্ষাগৃহে তাঁর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি আসনে উপস্থিত ছিলেন লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যপাল থাবাচাঁদ গেহলট, শিক্ষামন্ত্রী অশ্বথ নারায়ণ প্রমুখ। বুশরা যখন পদক নিতে মঞ্চে ওঠেন তখন তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছিল সাদা রঙের হিজাব। হিজাব তাঁর স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বকে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছিল।
বিশ্বেশ্বরিয়া টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (ভিটিইউ)-এর বিগত ২১ বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় বুশরার এই অসামান্য পারফম্যান্স। বুশরা এসএলএন ইঞ্জিরিয়ারিং কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছেন।
একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তাঁর এক বিশেষ সাক্ষাৎকার ‘পুবের কলমে’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
প্র: আপনার কি বরাবরই খুব ভালো রেজাল্ট ছিল?
বুশরা : জ্বি। আমি সবসময়ই লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়েছি। গোটা স্কুল-জীবনে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগের সব পরীক্ষাতেই গড়ে ৯৩ শতাংশের উপর নম্বর পেয়ে এসেছি।
প্র : আপনি কি নিয়মে পড়াশুনা করেন? আপনি কোনও বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করেন কি?
বুশরা : আমি প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা করে পড়াশুনা করি। আর তার মধ্যে দেড় ঘণ্টা মতো সময় ব্যয় করি আগের দিন যে পড়াগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যেত সেগুলো রিভিশন দিতে। পড়ার সময় আমি কখনই এই মনোবৃত্তি মাথায় রাখি না যে,আমাকে ক্লাসে প্রথম হতে হবে। গোটা অধ্যায় খুঁটিয়ে না পড়লে মনের দিক থেকে আমি খুশি হতে পারি না। সাধারণত আমরা যখন আগের বছরের প্রশ্নপত্র দেখি তখন একটা ধারণা তৈরি হয় যে, এই জায়গাগুলি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে সেগুলি না পড়ে বাদ দিয়ে রাখি। আমি কিন্তু এমনটা কখনোই করি না। আমি সবটাই অধ্যায়ন করেছিলাম। আর সেকারণেই অন্তবর্তী পরীক্ষাগুলিতেও আমি ভালো মার্কস পেয়েছি। এভাবেই আমি সম্পূর্ণ সিলেবাসটা কভার করি। ভাগ্যের হাতে ছেড়ে রাখি না।
প্র : আপনার রোল মডেল কে?
বুশরা : আমার বাবাই হলেন আমার রোল মডেল। তাঁর দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েই পড়াশুনার জন্য আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে বেছে নিই। আর বিটেক ইঞ্জিনিয়ারিং করতে আমার দাদা আমাকে সবসময়ই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছেন। বাড়ির দিক থেকে আমার উপর কেউ কোনও চাপ সৃষ্টি করেনি। আমি কি নিয়ে পড়ব-না-পড়ব তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আমার ছিল।
প্র : আপনার পরিবার নিয়ে আরও কিছু যদি আমাদেরকে জানান।
বুশরা : আমার বাবা শেখ জাহিরুদ্দিন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি বিভাগেই চাকুরিরত। মা বিএ গ্র্যাজুয়েট। তিনি ঘরের গৃহবধূ। ঘরের কাজকর্ম নিয়েই থাকেন। আমার বড়দা শেখ তানবিরুদ্দিন। তিনিও বি-টেক ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। আমার ছোট বোন কাবি ফাইসার কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে বিটেক করছে।
প্র : অন্যান্য ছাত্রদেরকে আপনি কি বার্তা দিতে চাইবেন?
বুশরা : আমি পড়ুয়াদেরকে বলব, তারা যেন তদের লক্ষ্যকে সীমায়িত না করে। বিশেষ করে বয়স সীমার মধ্যে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা স্থীর না করে নেয়। শিক্ষার কোনও গণ্ডী বা সীমানা হয় না। মেয়েদের অনেককেই পড়াশুনা করতে করতেই ছেড়ে দিতে হয়। আমি তাদেরকে বলব, তোমরা পড়াশুনা চালিয়ে যাও এবং ডিগ্রি সম্পূর্ণ করো। প্রত্যেক মহিলাকে কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট অবধি পড়া উচিত, যাতে করে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে। আমি পড়ুয়ায়াদের উদ্দেশ্যে আরও বলতে চাই যে, অন্যেরা কে কি বলছে, তাদের উন্নাসিকতাভাব এসব যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করতে পারে। শুধুমাত্র নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাকে স্থির রাখতে হবে, তা পূরণের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর অধ্যবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠি।
প্র : ভবিষ্যতে আপনার কি করার ইচ্ছা আছে।
বুশরা : আমি ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি একজন আইএএস অফিসার হতে চাই এবং দেশের সেবায় আত্মনিয়োজিত করতে চাই।
প্র : আপনার সখ? অবসর সময়ে আপনি কি করতে ভালোবাসেন?
বুশরা : আমি পড়তে ভালোবাসি। ভ্রমণ করতে ও নতুন জায়গায় বেড়াতে, নতুন কিছু করতে ভালোবাসি। আমি অবসর সময়ে কল্পসাহিত্য, কল্পসাহিত্যের বাইরে অন্যান্য বইও পড়ি।
প্র : হিজাব বিতর্ক এবং হিজাব নিয়ে হাইকোর্টের রায় নিয়ে কি বলবেন?
বুশরা : গ্র্যাজুয়েশনের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আমি হিজাব পরেছিলাম। আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক। হিজাব পরিধানের অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার। সংবিধানে আমাদের স্বাধীন ধর্মপালনের অধিকার দেওয়া আছে। আমি নিশ্চিত, ইনশা আল্লাহ্ আমরা সুপ্রিম কোর্টে ইনসাফ পাব।