পুবের কলম প্রতিবেদক: ইসলাম ১৪০০ বছর আগে পরিবার পরিকল্পনার কথা বলেছে। মুসলিমরা বেশি বেশি বাচ্চা জন্ম দেয়। ওরা দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়িয়ে একদিন সংখ্যাগুরুতে পরিণত হবে, এসব হিন্দুত্ব ন্যারেটিভ। আরএসএস, বিজেপি তাদের রাজনৈতিক রুটি সেঁকতেই এসব কথা বলে মেরুকরণের রাজনীতি করে।
দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ডক্টর এস ওয়াই কুরেশির লেখা ‘দ্য পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক পুস্তকটি ইতিমধ্যেই খ্যাতি পেয়েছে। বইটির বাংলা তরজমা ‘জনপুরাণ: ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা এবং ভারতীয় রাজনীতি’ অনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে।
বাংলা অনুবাদ উন্মোচন অনুষ্ঠানে কুরেশি দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন যে, মুসলিমদের সম্পর্কে কীভাবে কাল্পনিক মিথ তৈরি করা হচ্ছে। আর এর একমাত্র লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ প্রচার দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করা। খোলাখুলি বলা হচ্ছে, মুসলিমরা নাকি দেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। তারা বেশি বেশি সন্তান জন্ম দেয়। মুসলিমদের মধ্যে নাকি বহুবিবাহ বহুল প্রচলিত। মুসলিমরা পরিবার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। কারণ, তাদের ধর্ম তাদেরকে পরিবার পরিকল্পনা করতে নিষিদ্ধ করে। তিনি এসব মিথ বা কল্পকথাকে যুক্তি ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন। তাঁর বইটিতে তিনি বিস্তারিতভাবে এইসব বিদ্বেষ প্রচারণার মূলোৎপাটন করেছেন। তিনি পরিসংখ্যান, গবেষণা তথ্য, হাদিস, কুরআন ইত্যাদির আলোকে এসব যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করেছেন।
তিনি কুরআনের ও হাদিস উদ্ধৃত করে বুঝিয়েছেন, ইসলাম কীভাবে ১৪০০ বছর আগে পরিবার পরিকল্পনার কথা বলেছে। সে-সময় যদিও জনসংখ্যা কোনও সমস্যাই ছিল না। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন যে, ভারতবর্ষে মুসলিমদের মধ্যে বহুবিবাহের ঘটনা সবথেকে কম। বরং অন্যান্য ধর্মের মধ্যে বহুবিবাহের ঘটনা মুসলিমদের থেকে বেশি। তিনি আরও বলেন, ইসলাম বহুবিবাহে উৎসাহিত করে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদন দেয় মাত্র। কুরআনে মুসলিম মহিলাদের সমমর্যাদা ও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ ইত্যাদি মুসলিম দেশগুলিতেও পরিবার পরিকল্পনা আছে। পরিবার পরিকল্পনার দিক থেকে বিশ্বের সবথেকে বেশি এগিয়ে ইরান।
তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যা একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা। দেশের ২৫টি রাজ্যে মোট মুসলিম জন্মহার (টিএফআর) বিহারের হিন্দুদের জন্মহারের থেকেও কম। আরএসএস, বিজেপির সামালোচনা করে তিনি বলেন, মুসলিম মহিলাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে ওরা কথা বলে না। অথচ এগুলিই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য লেফটেন্যান্টন্যান্ট জেনারেল জামিরউদ্দিন শাহ, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ডা. কুণাল সরকার, জওহর সিরকার প্রমুখ।
আলোচনা পরিচালনা করেন প্রখ্যাত টিভি সাংবাদিক মণিদীপা ব্যানার্জি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রফেসর গাজালা ইয়াসমিন।