পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ২৮ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ুর কুড্ডালোরের বিখ্যাত চিদাম্বরম নটরাজ মন্দিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। তবে বিক্ষোভের কারণ নিহত ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারী ঘটনায়। মন্দিরের পুরোহিতরা জয়শীলা নাম এক দলিত মহিলা ভক্তকে হেনস্থা করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ব্যাপকভাবে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরে জয়শীলা নাম ওই দলিত মহিলাকে তাড়া করে পুরোহিতরা। বিশজন পুরোহিতের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি আইনে (পিওএ) দায়ের হয়েছে অভিযোগ। আইপিসির একাধিক ধারায় এই পুরোহিতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের দাবিও উঠেছে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিক্ষোভকারীরা দাবি এই ২০ জন পুরোহিতকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। হেফাজতে মন্দিরের দায়িত্ব পুরোহিতদের কাছ থেকে সরিয়ে হিন্দু ধর্মীয় ও চ্যারিটেবল এন্ডোমেন্টস বিভাগে হস্তান্তর করা করতে হবে।
তামিলনাড়ুর কুড্ডালোরের বিখ্যাত চিদাম্বরম নটরাজ মন্দিরের নাম অনেকেই জানেন। ভক্তরা অনেকেই এই মন্দিরে তামিল ভাষায় স্তোত্র গাওয়ার এবং গর্ভগৃহের মধ্যে হিন্দুধর্মের শ্রদ্ধেয় সিথাম্বলম মেদাইতে প্রবেশাধিকার পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে। এই গর্ভগৃহের উপর ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। ফলে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দ্রাবিড় কাজগাম (ডিকে), মক্কল আধিগারম, থানথাই পেরিয়ার দ্রাবিড় কাজগাম (টিপিডিকে), দ্রাবিড় বিদুথালাই কাজগাম (ডিভিকে), সিপিআই(এম),সহ একাধিক দল ও সংগঠন বিক্ষোভকারীদের দাবিকে পিছন থেকে সমর্থন করছে।
করোনা অতিমারীর আগে মন্দিরের সিথাম্বলাম মেদাইতে তামিল স্তব গাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছি। কিন্তু কোভিড-এর মধ্যে তা বন্ধ করা করে দেওয়া হয় । এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করা হয়েছে, আমরা অনুরোধ করছি যে আমাদের আবার সেখানেই প্রবেশাধিকার এবং তামিল ভাষায় মন্ত্র উচ্চারণের অনুমোদন দেওয়া হোক। কিন্তু আমাদের সে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কাজকে এই ব্রাহ্মণরা অনেকেই অস্পৃশ্য বলে মনে করেন। দাবি বিক্ষোভকারীদের অনেকের।
মন্দির সবার। সেখানে অস্পৃশ্যতা আমরা তা মেনে নিতে পারি না। রাজ্য সরকার সমস্ত বর্ণের পুরোহিত হওয়ার অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। তবুও, চিদাম্বরম মন্দিরে এটি কার্যকর করা হয়নি। আমরা বর্তমান সমস্যাটিকে মন্দিরের মধ্যে অস্পৃশ্যতা এবং জাতিগত অহংকার বিলুপ্তি হিসাবে দেখছি। এটি ভক্তি বা বিশ্বাসের বিষয় নয়। বলেছেন ডিভিকে নামক সংগঠনের সভাপতি বিদুথালাই রাজেন্দ্রন৷
২০০৮ অরুমুগাসামি নাম এক তামিল কবি, দীক্ষিতদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সীথাম্বলাম মেদাইতে বসে শান্তিপূর্ণভাবে তামিল স্তব পরিবেশন করেছিলেন। তাঁকে ও তার ৩৪ জন সমর্থককে সেদিন গ্রেফতার করা হয়। পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এই তামিল কবিকে । প্রতিবাদের পর সিথাম্বলাম মেদাইতে তামিল স্তব পরিবেশনের অনুমতি মিলেছিল।
যারা এখনও বিক্ষোভ করছেন তাদের অভিযোগ পুলিশ সেইভাবে কিছু করছে না । পুরোহিতদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ সেইভাবে সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ। তবে পুরোহিতরা যেভাবে দলিত মেয়েটির দিকে তেড়ে গিয়েছিল, এবং তাঁকে যেভাবে হেনস্থা করা হয় তার নিন্দা হয়েছে বহু মহলে।