পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশে যখন বিজেপির পালে হাওয়া ঠিক তখনই উঠে এল সমাজবাদী পার্টির নেতা আলম বারির নাম। ৮৬ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান সপা নেতা আজমগঢ়ের নিজামাবাদ বিধানসভা থেকে বিজেপির মনোজ যাদবকে ৩৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন। এই নিয়ে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নিজামাবাদ থেকে পাঁচবার জয়ী বিধায়ক আলম বারি। বর্ষীয়ান সপা নেতা রাজনীতিতে একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত।
ভোটের ময়দানে নজর কাড়তে যখন বিরোধীরা নিজেদের একনিষ্ঠ কর্মী, সৎ আদর্শবাদী প্রমাণেস ব্যস্ত তখন আলমের কাজ ছিল সকাল ৯ টায় বাড়ি থেকে বের হওয়া আর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ তৈরি করা। ভোটের প্রচারে তার নামে কোথাও ব্যানার বা পোস্টার দেখা যায়নি। নেই টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ। পূর্বাঞ্চলে পেশীশক্তি এবং অর্থশক্তির রাজনীতির মধ্যে আলম বারির সরল জীবনযাত্রা এবং সত্যবাদিতাই তাঁর ইউএসপি।
আলিম বারি ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম সমাজবাদীর পার্টির টিকিটে নিজামাবাদ বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেন। এর পর ২০০২ সালে তিনি ফের সপার টিকিটে জয়যুক্ত হন। ২০০৭ সালে বারি বহুজন সমাজবাদী পার্টির বাহুবলী অঙ্গদ যাদবের কাজে পরাজিত হন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে আলম ফের সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জয়ী হয়।
রাজনীতিবিদের পাশাপাশি আলম বারি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে গোরক্ষপুরে চাকরি করলেও জওহরলাল নেহেরু, সুভাষ চন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধির কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজসেবা শুরু করেন।
টিনের চাল দেওয়া ছাউনি ঘরেই পরিবার নিয়ে থাকেন আলম বারি। বাড়িতে কোনও কাজের লোক নেই। বাড়ির কাজ নিজে হাতেই সারেন। ছেলে ও নাতিরাও সাহায্য করেন। তার মধ্যেই বিধায়কে কাজও চলতে থাকে। সকলের অভাব-অভিযোগ শোনেন আলম। তার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনজন বিদেশে থাকেন। একজন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। অপর একজনের ফার্নিচারের দোকান আছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গেই তাঁর পার্সোন্যাল অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন।
আলম বারির পরনে থাকে কুর্তা পায়জামা, পায়ে হাওয়াই চটি, কানের হেয়ারিং মেশিন, আর হাতে সাধারণ মানের মোবাইল ফোন। যেখানে নেতা মন্ত্রীদের বড় গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়, সেখানে বিধায়ক আলম বারির যাতায়াত বলতে বাস আর সেকেন্ড হ্যান্ড বোলেরো।
বিধায়ক তহবিলের পুরো টাকাই জনসেবার কাজে ব্যয় করেন তিনি। সপা সরকারের আমলে একাধিকবার মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বারি।
নিজামবাদ অঞ্চলের শহিদদের নামে চারটি বড় গেট তৈরি করেছেন তিনি। এগুলো আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করেন আলম বারি।
পূর্বাঞ্চলে নিজামাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা। ঐতিহাসিক দিক দিয়েও নিজামাবাদের গুরুত্ব রয়েছে। নিজামবাদে সুফি সাধক নিজাম-উদ-দীনের সমাধিস্থল। গুরু নানক দেব এখানে গুরুদ্বারে অবস্থান করেছিলেন। এটি আধুনিক যুগের বিখ্যাত কবি অযোধ্যা সিং হরিওধের জন্মস্থানও।