মুসরত আরা পারভিন, চাঁচলঃ এখনও ফেরেনি ছেলে। সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। সূদুর ইউরোপের ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন দুজনেই।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে কুড়ি হাজার পড়ুয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেন। তার মধ্যে মালদার অন্যান্যদের পাশাপাশি রয়েছেন রতুয়া-১ ব্লকের পিনডালতলা গ্রামের মুহাম্মদ আরিফ। তিনি জাফ্রোজিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আরিফের আব্বা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা বিলকিস বিবি গৃহবধূ। দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ির ছোট ছেলেকে ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়াবেন বলে। কিন্তু, এর মধ্যেই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের খবরে পরিবার।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে থাকা ছেলের জন্য উৎকন্ঠার প্রহর শুনছেন পরিবারসহ পাড়াপড়শিরা। যদিও খবর নিয়ে জানা গিয়েছে গত সোমবারে ট্রেনে চেপে হাঙ্গেরির দিকে রওয়ানা দিয়েছে মুহাম্মদ আরিফ সহ তার ১৬ জন সহপাঠী। এরা সবাই বাঙালি।
আরিফের আব্বা নেজামউদ্দিন সাহেব জানান, ছেলের সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আরিফের বয়ান অনুযায়ী, গত সপ্তাহের শনিবার পর্যন্ত তাদের মেডিকেল কলেজে ক্লাস হয়েছে। তারপরেই রবিবার তাদের হোস্টেলের ওয়ার্ডেন সবাইকে নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। সেদিন সবাই সেনাবাহিনীর বাংকারে রাত কাটিয়েছেন। মেডিকেল পড়ুয়ারা অবশেষে সোমবার ট্রেনে চেপে হাঙ্গেরিতে পৌঁছান। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দূতাবাসের তরফেই তাদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
নেজামউদ্দিন সাহেব জানান গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া আক্রমণ করার পর থেকেই তারা বিচলিত। এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেলেও ওদের বাড়ির ছোট ছেলে এখনও দেশে ফেরেনি। তাই মনটা খারাপ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে নবান্নে কন্ট্রোল রুম খোলা হলে, কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য জমা দেন তারা। এরপর থেকেই বাড়ি ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছে মুহাম্মদ আরিফের মত শতশত ডাক্তারি পড়ুয়ার পরিবার।
মুহাম্মদ আরিফের মা বিলকিস বিবি জানান, তার তিন ছেলের সবচেয়ে ছোট আরিফ। বড় ছেলে মাজহারুল আলম চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। তিনি মুম্বাইয়ে চাকরি করেন। দ্বিতীয় ছেলে আজহারুল ইসলাম কর্মসূত্রে বহরমপুরে থাকেন। খুব কষ্ট করে জমি জায়গা বিক্রি করে বাড়ির ছোট ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের যা অবস্থা ভবিষ্যতে যুদ্ধবিরতি হলেও সেই দেশটির পুনর্গঠনে অনেক সময় লাগবে। তাই ছেলের নিরাপত্তার পাশাপাশি তার ভবিষ্যত নিয়েও উদ্বেগে রয়েছে পরিবারের লোকেরা।