জৈদুল সেখ, ভরতপুরঃ সব কিছু ঠিকই চলছিল। হঠাৎ করেই যেন সব কিছু এক মুহূর্তের মধ্যে পালটে গেল। বেজে উঠল সাইরেন। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। চারদিকে গোলাবর্ষণ আর বারুদের গন্ধ। মনে হয়েছিল আর বাড়ি ফিরতে পারব না। আব্বা-আম্মিকে আর দেখতে পাব না। একদিকে কনকনে ঠাণ্ডা, তার ওপরে খাবার নেই, জল নেই। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলাম। এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেনে থেকে সদ্য বাড়ি ফিরে আসা নাজিউর রহমান। গত বুধবার মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার মাসুন্দি গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন ডাক্তারি পড়ুয়া নাজিউর রহমান। ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় স্বস্তিতে পরিবার ও এলাকার মানুষ।
নাজিউর জানিয়েছেন, গত ১২ ডিসেম্বর ইউক্রেনের লাভানো ফ্যাঙ্কিভেক্স ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হই। ইভানুর ফ্রেঙ্কনুর শহরের হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করতাম। ২৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে হামলা হওয়ার পর আরও আতঙ্ক বেড়ে যায়। বাড়ি ফিরলেও, মানসিক শান্তি ফেরেনি। ইউক্রেনের গোলাবারুদের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
নাজিউর বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি যে কি, সেটা না দেখলে বুঝতে পারতাম না। সেই অভিজ্ঞতাও হল, তবে ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে বের হতে পারব কিনা জানিনা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গোটা ইউক্রেনে বেজে ওঠে সাইরেন। যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে যায়। কিছু সময় পরেই শোনা যায়, মিসাইল পড়ার বিকট আওয়াজ। মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। আমাদেরও আতঙ্ক বাড়তে থাকে। প্রতিটা রাত মনে করলে এখনও বুক কেঁপে ওঠে।
ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদের বলা হয় বর্ডারে পৌঁছানোর জন্য। সাড়ে চার হাজার টাকা করে দিয়ে বাসে আমি বর্ডারে এসে পৌঁছাই। তবে ছিল না কোনও খাবারের ব্যবস্থা, পানীয় জল। মাইনাস ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রায় দীর্ঘ ১২-১৪ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রোমানিয়া বর্ডার পার করতে পারি। অবশেষে রোমানিয়া বর্ডার হয়ে বিমানবন্দর এসে দেশে ফেরা
ইউক্রেনের মানুষের ভালো ব্যবহারের প্রশংসা করেছেন নাজিউর। বাকিদের দ্রুত দেশে ফেরানো জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন নাজিউর। ছেলেকে ঘরে ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন নাজিউরের আব্বু রেজাউর রহমান ও আম্মি রাজিয়া খাতুনের।
নাজিউরের আর্জি, আমরা চাই সব আগের মতো হয়ে যাক। আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।