পুবের কলম প্রতিবেদক : এক চুক্তিতেই পরমাণু অস্ত্র হয়েছিল ধ্বংস বিশেষ প্রতিবেদন উত্তরাধিকারসূত্রে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু সেই অস্ত্র স্বেচ্ছায় পরিত্যাগও করেছিল তারা। শর্ত ছিল আমেরিকা ও রাশিয়া থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে অস্ত্র ত্যাগ করা তাহলে ভুল ছিল ইউক্রেনের? সেই সাথে আরেকটি প্রশ্ন এ পরিস্থিতি থেকে কী সিদ্ধান্ত নেবে ইরান? সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই বিশাল সামাজ্যের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ভাগটি যায় আজকের রাশিয়ার হাতে। তারপরও হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়ে যায় ইউক্রেনের মাটিতে।
ইউক্রেন যখন আলাদা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন সে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের মালিক। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টএর বক্তব্য অনুযায়ী ইউক্রেনে সে সময় প্রায় ৩ হাজার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বর শক্তিধর দেশগুলো এক কূটনৈতিক বৈঠকে মিলিত হয়। বুদাপেস্টে ইউক্রেন ও বেলারুশের সাথে কাজাখস্তান, রাশিয়া , ব্রিটেন ও আমেরিকার নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে স্বাক্ষরিত বুদাপেস্ট মেমোরান্ডাম অনুযায়ী, পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক সহায়তায় নিজের পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করবে ইউক্রেন। বিশ্ব পরমাণুমুক্ত হোক সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউক্রেন মেমোরান্ডামে সম্মতি দিয়েছিল।
২০১৪ সালে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বুদাপেস্ট মেমোরান্ডাম লঙ্ঘন করে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। বর্তমান পুতিনের দাবি ইউক্রেনের কাছে সোভিয়েত পরমাণু হাতিয়ারের বহু নকশা রয়ে গেছে। সেগুলো থেকে ইউক্রেন এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চায়। এ বিষয়ে ইউক্রেনের এমপি অ্যালেক্সি গোঞ্চারেঙ্কো জানিয়েছেন ইউক্রেন পরমাণু শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠতেই পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্র ছেড়ে দিতে বলে। সে সময় আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছ থেকে সুরক্ষা গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতিতে পরমাণু অস্ত্রের রাস্তা থেকে সরে গিয়েছিল ইউক্রেন।
অ্যালেক্সি জানিয়েছেন, ইউক্রেন মানব ইতিহাসে একমাত্র রাষ্ট্র – যারা দুনিয়ার তৃতীয় পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়েও ১৯৯৪ সালে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া সুরক্ষার গ্যারান্টির বিনিময়ে অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছিল। সেই গ্যারান্টি এখন কোথায়? এখন আমাদের ওপর বোমা বর্ষণ হচ্ছে , আমরা মরছি।
ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এনরি জাহোরোদনিউকও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কোনও কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই নিজেদের পরমাণু অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছি। আজ তার ফল ভোগ করছি ।’আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন , ইউক্রেনের এ পরিস্থিতি ইরানকে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কারণ সুরক্ষার গ্যারান্টি উপেক্ষা করে ইউক্রেনে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে এমনটি ভাবার সুযোগ কম।