পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কিয়েভে ঢুকে গেছে রুশসেনা। সীমান্ত অঞ্চলগুলো থেকে কিয়েভে যাওয়ার যতগুলো পথ, তার মধ্যে বেলারুশের দিকে থেকে যাওয়ার রাস্তাই সবচেয়ে সংকীর্ণ। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বাহিনীগুলো ওই পথেই এগিয়ে গিয়ে কিয়েভের উত্তরে চেরনোবিলের একসময়কার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখলে করে নেয়। এদিকে শুক্রবার ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, “আমাকে তাদের টার্গেটগুলোর মধ্যে এক নম্বরে রেখেছে শত্রুরা, দুই নম্বরে আমার পরিবার। তারা রাষ্ট্রপ্রধানকে নিঃশেষ করে ইউক্রেইনকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে চায়। “আমি রাজধানীতেই থাকবো। আমার পরিবারও ইউক্রেইনেই আছে।”
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার ভোরে আচমকাই সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেন। এর পরেই রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে মানুষ। বহু মানুষ আটকে পড়েছে। ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রায় এক লক্ষ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে কিয়েভ দখল করে দেশটির পশ্চিমাপন্থি সরকারকে উৎখাত করা।
এদিকে পুতিনের দাবি, ইউক্রেইনের ‘গণহত্যার’ হাত থেকে রুশ নাগরিকসহ সাধারণ মানুষকে রক্ষায় রাশিয়া ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইউক্রেইন আয়তন বিবেচনায় রাশিয়ার পরই ইউরোপের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র।
ইউক্রেন সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশের একটি আবাসিক বিল্ডিংকে লক্ষ্য করে মিশাইল নিক্ষেপিত করেছে রুশ সেনা। এখনও পর্যন্ত রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে ১৩৭ জন ইউক্রেনের বাসিন্দা নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৮শ শতকে কিয়েভ নগরীর প্রতিরক্ষা জোরদার করা হয়। ১৯শ শতকে রুশ সাম্রাজ্যে শিল্প বিপ্লব ঘটলে এটি একটি বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র নগরী হিসেবে পুনরুত্থান ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) জার্মান সেনারা কিয়েভকে দখল করে রাখে। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পরে এখানে বহু লড়াই হয়। সেই বছরই ইউক্রেন রুশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি সেনারা ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত কিয়েভ দখল করে রাখে এবং এসময় নগরীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই যুদ্ধে কিয়েভের প্রায় ২ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে নগরীটিকে ফের নির্মাণ করা হয় এবং সোভিয়েত আমলের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে নগরীটি আবার তার পুরনো জায়গা ফিরে পায়। এসময় এটি মস্কো ও সাংত পিতেরবুর্গের পরে সোভিয়েত দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম নগরীর মর্যাদা লাভ করে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে কিয়েভ স্বাধীন রাষ্ট্র ইউক্রেনের রাজধানীতে পরিণত হয়। এসময় ইউক্রেনের অন্যান্য অংশ থেকে অধিবাসীরা ধীরে ধীরে কিয়েভে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।
দেশের অর্থনীতি এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে রূপান্তরের মাধ্যমে কিয়েভ ইউক্রেনের বৃহত্তম এবং ধনী শহরে পরিণত হয়।