পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক : আহমদাবাদে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আগেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই ঘটনা ঘটল কলকাতাতেও। রবিবাসরীয় ইডেনে সিরিজের শেষ টি২০ ম্যাচে রোহিতের টিম ইন্ডিয়ার কাছে ১৭ রানে হেরে কুড়ি বিশের সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হল কায়রন পোলার্ডের দল।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন পরবর্তীতে মাঠে অনেক আগেই খেলা ফিরলেও, দর্শক ফিরল রবিবারের ইডেনে। তবে সেটাও আধপেটা। তাতে অবশ্য ভারত- ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি২০ ম্যাচে দর্শকের উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। দীর্ঘ সময়ের পর ক্রিকেটের নন্দন কাননে ক্রিকেট ফেরায় যেন অক্সিজেন পেল কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারতের পতাকা বিক্রি, বিরাট-রোহিতের নামঙ্কিত জার্সি, মাথায় ফেট্টি বিক্রি সহ দীর্ঘদিন পর ক্রিকেট প্রেমীদের চোয়ালে ’ইন্ডিয়া’ লেখার ঢল দেখা গেল পরিচিত ময়দানের এদিক ওদিকে। পাশাপাশি ম্যাচে বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল ভারতের ইনিংসের শেষ দিকে সূর্যকুমার যাদব ও ভেঙ্কাটেশ আইয়ারের ব্যাটিং ঝড়। দীর্ঘদিন পর যে ব্যাটিং ঝড় তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলো পঁচিশ হাজারের ইডেন।
আগে টি২০ ম্যাচে ভারতীয় দলের তিন জোরে বোলারের হতশ্রী পারফরম্যান্স চূড়ান্ত হতাশ করেছিল টিম ম্যানেজমেন্টকে। যার ফলে রবিবারের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে একাধিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। বিশেষ করে জোরে বোলিং বিভাগে। সেই মতো ভুবনেশ্বর কুমারের জায়গায় শেষ ম্যাচে দলে জায়গা পেলেন পেসার আভেস খান। আজ তাঁর আন্তর্জাতিক টি ২০ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটল। এছাড়া স্পিনার ইউজবেন্দ্র চাহালের জায়গায় দলে এলেন মিডিয়াম পেসার শার্দুল ঠাকুর। বিরাট, পন্থ খেলবেন না আগেই জানা গিয়েছিল, তাদের জায়গায় দলে এলেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও শ্রেয়স আইয়ার।
রবিবারের ম্যাচে ছিল বৃষ্টির ভ্রুকুটি। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, ইডেনে ম্যাচে শুরুর কিছুক্ষণ আগেই কলকাতা জুড়ে বৃষ্টি নামবে। তাতেও অবশ্য কলকাতার ক্রিকেট পাগল মানুষগুলিকে মাঠবিমুখ করা যায়নি। বৃষ্টির চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই ২৫ হাজারের বেশি দর্শক হাজির হন ক্রিকেটের নন্দন কাননে। টিকিট কেটে সাধারণ দর্শকের গ্যালারিতে ঢোকার সুযোগ না থাকলেও সিএবির লাইফ মেম্বার, অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, অনরারি মেম্বার, এছাড়া সিএবির অনুমোদিত বিভিন্ন ক্লাব এবং তাদের সদস্যরা ম্যাচ দেখলেন। যে ম্যাচটি শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কায়রন পোলার্ডের টস জয়ের মধ্যে দিয়ে। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন পোলার্ড। পরে ব্যাট করে গত ম্যাচে তার দলকে প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন পুরান ও পাওয়েলের লড়াই। তেমন অঘটনের আশায় সম্ভাবত টসে জিতে রবিবারের ম্যাচে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পোলার্ড।
বিরাট না খেলায় এ ম্যাচে ওপেনিং করতে দেখা যায়নি অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ইশানের সঙ্গে ওপেনিং করতে মাঠে নামেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। যদিও শুরুতেই ভারতকে ধাক্কা দিলেন জেসন হোল্ডার। মাত্র ৪ রানের মাথায় ঋতুরাজকে আউট করেন তিনি।মাঠে নামলেন নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স।ইশান কিষানকে নিয়ে ইনিংসের প্রথম পাওয়ার প্লে দারুণভাবে কাজে লাগালেন শ্রেয়স।প্রথম ৬ ওভারে ভারত ১ উইকেট হারিয়ে ৪৩ রান তুলে ফেলে। তবে বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ওয়ালসের বলে লং অফে দাঁড়ানো হোলা্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হলেন শ্রেয়স (২৫)।তখনই ব্যাট হাতে মাঠে রোহিত। এর ঠিক পরের ওভারে আগের ম্যাচে বিরাট কোহলিকে বোল্ড করার কায়দায় ইশান কিষানকেও (৩৪) বোল্ড আউট করলেন রোস্টন চেজ।
পাওয়ার প্লের পর দুটি উইকেট হারিয়ে হঠাৎ যেন ভারতের রানের গতি কমে যায়। সেই গতি ফিরিয়ে আনতে মাঝে মধ্যে সূর্যকুমার যাদবকে বড় বড় শট খেলতে দেখা গেলেও, ঠিক তখনই দলকে হতাশ করলেন ক্রিজের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত। পয়া ইডেন আজ তাকে খালি হাতে ফেরালেন। মাত্র ৭ রানে আউট হন রোহিত।ম্যাচের শুরুর দিকে এদিন কলকাতায় ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে ভারতের ইনিংসের শেষবেলায় ইডেনের ২২ গজে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন সূর্যকুমার, ভেঙ্কাটেশ জুটি। ম্যাচের শেষ বলে সূর্যকুমার যাদব আউ্ট হলেও তার নামের পাশে ছিল ৩১ বলে ৬৫ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস। অন্যদিকে ১৯ বলে ৩৫ রান করে অপরাজিত থেকে যান ভেঙ্কাটেশ। মূলত তাদের এই ঝোড়ো ইনিংসের ফলে শেষ ভারত ৫ উইকেটের বিনিময়ে নিজেদের স্কোর বোর্ডে ১৮৪ রান তুলে ফেলে।
১৮৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখে এদিনও আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলা শুরু করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা। তবে বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে তারা। আর সেই দুটি উইকেট আসে দীপক চাহারের ঝুলিতে। মায়ার্স ৬ এবং শাই হোপ ৮ রানে সাজঘরে ফেরার পর খেলার রাশ হাতে নেন আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রায় জয়ের সীমানায় নিয়ে যাওয়া পুরান- পাওয়েল জুটি। এই দুই ব্যাটার যেন আজ নিজের দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার জেদ নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। যদিও হর্ষল প্যাটেলের বলে শার্দুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে পাওয়েল ২৫ রানের মাথায় আউট হওয়ায় তাদের সেই পরিকল্পনা যেন ভেস্তে যায়।
রভম্যান পাওয়েলকে হারানোর কিছুক্ষণের মধ্যে ৫ রানে কায়রন পোলার্ড ও ২ রানে জেসন হোল্ডার আউট হন। এই দু’জনের উইকেট তুলে নেন ভেঙ্কাটেশ আইয়ার। ১২ রান করা রোস্টন চেজকে বোল্ড করলেন হর্ষল প্যাটেল। তখনও অবশ্য চলছে নিকোলাস পুরানের একার হাতে দলকে জয় এনে দেওয়ার আপ্রাণ লড়াই। ইডেনে গত বুধবারে প্রথম টি২০তে ৬১, শুক্রবার দ্বিতীয় টি২০তে ৬২ করা নিকোলাস পুরান ব্যাট থেকে এদিনও বেরিয়ে এলো আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি। এদিনও তিনি আউট হলেন ৬১ রান করে। শার্দুলের বলে পুরানের অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরেন উইকেটরক্ষক ইশান কিষান। আর তাতেই ক্যারিবিয়ানদের শেষ হয়ে যায় যাবতীয় জারিজুরি। পুরান ফিরতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে ফেরার আশাও শেষ হয়ে যায়। ২৯ রানে সেইফার্টও হর্ষলের শিকার হওয়ায় আহমদাবাদে ওয়ানডে সিরিজের পর ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি২০তে হোয়াইটওয়াশের দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে যায়।২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রানে থেমে যায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। ভারতের হয়ে তিনটি উইকেট পান হর্ষল প্যাটেল, দুটি করে উইকেট তুলে নেন দীপক চাহার, ভেঙ্কাটেশ আইয়ার ও শার্দুল ঠাকুর।