মুহাম্মদ মুস্তাক আলি– জঙ্গিপুর: এবার হিজাবে বাধা মুর্শিদাবাদের সুতি থানার বহুতালি হাইস্কুলে। অভিযোগ– প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু মিত্র শুক্রবার প্রার্থনার সময় ঘোষণা করেন এবার থেকে হিজাব– এমনকি মাথায় ওড়না দিয়ে আসলেও স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। যার জেরে শনিবার বিদ্যালয় খুলতেই প্রধান শিক্ষকের নয়া বিধান প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুবের কলম প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন শিক্ষদফতর শোকজ করেছে তাকে। প্রশাসনিক ভাবেও তাকে শোকজ করা হয়েছে।
একই দাবিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের পাশাপাশি একই দাবিতে জড়ো হন বহু সাধারণ মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। সকালের দিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিকেলে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করে আনার সময় জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ভেঙে দেওয়া হয় সুতি-১ ব্লকের বিডিওর গাড়ির কাচ। একটা সময় পুলিশকে লক্ষ করে জনতা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করলে পুলিশও লাঠিচার্জ করে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করে।
স্থানীয়দের বক্তব্য– পুলিশ অন্তত ৬-৭ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ‘পুবের কলমের’ পক্ষ থেকে বার বার ফরাক্কার এসডিপিও ওয়াসিম খানের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান– রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আখরুজ্জামান– রাজ্য তৃণমূল সহ সভাপতি মুহাম্মদ সোহরাব প্রমুখ বহুতালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু মিত্রের আচরণের সমালোচনা করেছেন। একইসঙ্গে তারা অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষদের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। খলিলুর-আখরুজ্জামান-সোহরাব রাজ্যের পুলিশ এবং সরকারের প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসও মানুষকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। জঙ্গিপুর লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জী এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তিনি এই ইস্যুতে তৃণমূল নেতৃত্বের উপরেই ভরসা করেন বলে মন্তব্য করেছেন।
উত্তেজিত এলাকাপরিদর্শনে যান জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসপি ভোলানাথ পাণ্ডে। বহুতালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু মিত্রের বিতর্কিত হিজাব নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার উঠেছে সুশীল সমাজের নাগরিকদের মধ্য থেকে। শিক্ষাপ্রেমীদের বক্তব্য– শিক্ষকের কাজ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দান করা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সোহরাবের মতে হিজাব পরা ছাত্রীর নিজস্ব ব্যাপার– তা স্কুল ড্রেস কোডে কোনও বাধা নয়। জঙ্গিপুরের এআই (এইচএস) সুশীল বর্মন জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন– প্রধান শিক্ষক এমন নির্দেশ দিয়ে থাকলে এবং সেটা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।