পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ গোমাংস, নামায এবং টুপির মতো হিজাবকেও এবার দেশে নিশানা করা হচ্ছে। মুসলিম মহিলাদেরকে ‘একঘরে’ করে আক্রমণ করার সর্বশেষ অজুহাত এটি। দেশজুড়ে এভাবেই ইসলামিক রীতিনীতি অনুশীলনের উপর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট মহিলারা। প্রায় ২০০০ ব্যক্তি এবং ১৩০টি সংস্থা স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্নাটকের মান্ডা থেকে ভাইরাল হওয়া সাম্প্রতিক ভিডিয়োটিতে গেরুয়া পরা একদল পুরুষ হিজাব পরিহিত মুসলিম মহিলাকে ঘিরে ধরে তাকে হেনস্থা করছে। এটি একটি সতর্কবাণী যে কীভাবে হিজাব সহজেই টার্গেটে পরিণত হতে পারে। মুসলমানদের উপর সম্মিলিত হামলার পরবর্তী অজুহাত হয়ে উঠবে এটি।
অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ পিপলস মুভমেন্টস ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেন এবং পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ পিটিশনের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে কিছু বিশিষ্ট গোষ্ঠী। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট বারিন্দা গ্রোভার মহিলা সমাজকর্মী কবিতা কৃষ্ণান এবং সাফুরা জারগারের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এটি শুরু হয়েছিল হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের তাদের কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মধ্য দিয়ে। বেশ কিছুদিন কলেজের গেটে বিক্ষোভ চলে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের তাদের ভিতরে গিয়ে ক্লাস করতে অনুমতি দেয়নি। বিরোধ চরম আকার ধারণ করায় ছাত্রীরা কর্নাটক হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে যে হিজাব পরা তাদের মৌলিক অধিকার।
বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বিচারপতি মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠান। স্কুল ও কলেজসহ সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় রীতির কথা উল্লেখ করে স্বাক্ষরকারীরা জোর দিয়েছেন যে সংবিধান বহুত্ববাদী দেশের উপর সাংস্কৃতিক অভিন্নতা আরোপ করার পরিবর্তে বহুত্বের লালনকে বাধ্যতামূলক করেছে। মহিলা সমাজকর্মীরা বলেন, এটি হিজাব নয় যা চলমান শিক্ষাগত সমস্যাকে উসকে দিয়েছে। এটা হিন্দুত্বআধিপত্যবাদী দল যারা হিজাব নিষিদ্ধ করার দাবিতে গেরুয়া ওড়না নিয়ে বিক্ষোভ করে সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করেছে। গেরুয়া ওড়না এবং হিজাব উভয়ই নিষিদ্ধ করা একটি ন্যায্য বা ন্যায়সঙ্গত সমাধান নয়। কারণ মুসলিম ছাত্রীদের হিজাবের বিপরীতে গেরুয়া ওড়না পরার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আদায় এবং মুসলিম মহিলাদের ভয় দেখানো।
এই মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি হিজাবি ছাত্রীদের আলাদা শ্রেণীকক্ষে বসানোর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করে এবং এটিকে ‘বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের মত, মেয়েদের তাদের পোশাকের জন্য শাস্তি ছাড়াই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের মাথার ভেতরে কী আছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া তাদের মাথার উপরে কী আছে তার পরিবর্তে। আমরা এমন প্রত্যেক পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াই যাদেরকে বলা হয় যে তিনি কলেজে প্রবেশ করতে পারবেন না কারণ তিনি জিন্স বা শর্টস পরেছেন বা তিনি হিজাব পরেছেন। যে কোনও পোশাক পরারই স্বাধীনতা আছে।