পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সম্প্রতি কর্ণাটকের উদুপি জুনিয়র কলেজে হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ যেমন তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, তেমনই ছাত্রীরাও তাদের অবস্থানে অনড় ছিল।তবে সোমবার কর্ণাটকের উদুপি জেলার কুন্দাপুরা এলাকায় সরকারি পিইউ কলেজের কলেজ প্রাঙ্গণে হিজাব পরা ছাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আপাতত হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত রাখতে আপাতত পৃথক কক্ষে বসে ক্লাস করানো হবে হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের।
অন্যদিকে এলাহাবাদের বাসিন্দা সারা আহমেদ সিদ্দিকী হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ইসলামোফোবিয়া বলেন, ‘এটা জেন্ডার ইসলামোফোবিয়া, এর আগেও মুসলিম মেয়েরা এই ধরনের সস্তা রাজনীতির শিকার হয়েছেন। ডানপন্থী ও বামপন্থী সংগঠনগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে নির্ভয়ে আওয়াজ তোলা সহ্য করে না।
এতদিন পর্যন্ত মুসলিম মেয়েদের হিজাব ও বোরখাকে নিপীড়নের নাম দেওয়া হত, মুসলিম মহিলাদের বোরখার কারণে কটূক্তি করা হতো। কেউ ভাবেনি যে বোরখা পরা মুসলিম মেয়েরা এবং মহিলারা নির্ভয়ে তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলতে পারে, নির্ভয়ে সরকারের নীতি এবং আইন সংশোধনের বিরোধিতা করতে পারে।’ সারা ভ্রাতৃত্ব আন্দোলন এলাহাবাদ ইউনিটের সভাপতি তাঁর হিজাব সম্পর্কে বলেন, “আমার হিজাবই আমার আসল শক্তি, এটা আমার উন্নতির পথে বাধা নয়।” এর আগে সারা জিম প্রশিক্ষক হিসেবে ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন। তিনি বলেছেন যে তার হিজাব নিয়ে কিছু লোকের সমস্যা ছিল কিন্তু তার হিজাবের কারণে তাকে কখনও কাজ করতে কোনও অসুবিধা হয়নি।
উদুপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধকে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে সারা বলেছেন, ‘কলেজ প্রশাসনের এই কাজটি আমাদের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত। এর ফলে ওই ছাত্রীদের শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না, শিক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।’
মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক গাজালা আহমেদকে যখন তার চাকরি এবং তার হিজাবের মধ্যে একটি পছন্দ দেওয়া হয়, তখন তিনি হিজাবকে বেছে নেন। গাজালা আহমেদ আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণমাধ্যমে মাস্টার্স করেছেন। একটি মিডিয়া সংস্থার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারের সময় তিনি তার হিজাব খুলতে অস্বীকার করলে তার নাম লাইমলাইটে আসে।
হিজাব সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে গাজালা বলেন, ‘এটা আমার পরিচয়। এটা আমার পছন্দ নয়, আমার কর্তব্য। কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীরা নির্ভয়ে নিজেদের পরিচয়ের জন্য যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে তা প্রশংসনীয়। পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে। মুসলিম মেয়েদের থেকে শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, মুসলিম মেয়েরা শিক্ষা না নিলে তারা আর কাজ করবে না, অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলতে পারবে না। বর্তমান যুগে সকল প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শুধু মুসলিম নারীই নয়, দেশের সব নারীই অপমানিত হচ্ছেন।’