পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ধর্মীয় গরিষ্ঠতার ছদ্মবেশে নির্বাচনী গরিষ্ঠতা কায়েম করে একচেটিয়াভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের চেষ্টা হচ্ছে ভারতে। এমনই গুরুতর অভিযোগ করলেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। ইন্ডিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক মার্কিন কংগ্রেসে এক শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। আমেরিকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শাখা– জেনোসাইড ওয়াচ– হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটস– নিউ ইয়র্ক স্টেট কাউন্সিল অফ চার্চেস এবং আরও কিছু সংগঠনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিল।
হামিদ আনসারি বলেন– ভারতে এখন প্রথাগত জাতীয়তাবাদকে বলি দিয়ে কাল্পনিক এক ধরনের সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের উত্থানের চেষ্টা চলছে। জাতীয়তাবাদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যগুলিকে জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে। অথচ ভারতের ২০ শতাংশ নাগরিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেশে ভাগাভাগি চলছে। সহিষ্ণুতার কোনও কদর নেই। সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। তাঁর প্রশ্ন– বহুত্ববাদী সমাজে কেন নানা মতকে নিয়ে চলা হয়? কেন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের নীতিতে বিশ্বাসের দীর্ঘ পরম্পরা ছিল আমাদের? কেন একতরফাভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হত না? আগে এর জবাব চান তিনি।
বেঙ্গালুরুর আর্চবিশপ পিটার ম্যাশাডো এই শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন– ‘কর্নাটকে ধর্মান্তর আইনে তিনি দুঃখিত। এমন বিলের দরকার ছিল না। ভারতের সংবিধান যথেষ্ট শক্তিশালী এবং এসব সমস্যার সমাধান তাতেই রয়েছে। ভয় হয় একতরফাভাবে এই আইন খ্রিস্টানদের উপর প্রয়োগ হবে। এতে বিয়ের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হবে’।
ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম-এর প্রধান নাদিন মায়েনজা বলেন– ‘দুভাগ্যবশত ভারতে সাম্প্রতিককালে দ্রুত হারে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনমন হচ্ছে। ২০১৪ সালে বিজেপি পরিচালিত সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই হিন্দু রাষ্ট্রের লক্ষ্য নিয়ে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধর্মীয় পথে চালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও ভারতের আইনি কাঠামো মুসলিম– খ্রিস্টান– শিখ– দলিত এবং আদিবাসীদের ভিন্নভাবে দেখার বিরোধী। তাই পদে পদে বাধা পাচ্ছে সরকার।
ম্যাসাচুসেটস-এর সেনেটর (ডেমোক্রেটিক দলের) এড মারকে বলেন– ভারতে যেভাবে সংখ্যালঘুদের অধিকার মোদি সরকার হরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে– তা উদ্বেগজনক। ভারতের গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। আমেরিকা সরকারের উচিত মোদি সরকারের এইসব কাজের বিরোধিতা করা। কারণ আমেরিকা সরকার ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জেমি রাসকিন এবং অ্যান্ডি লেভিনও বক্তব্য রাখেন। ভারতে বুল্লি বাঈ অ্যাপের শিকার সমাজকর্মী আমিনা কউসর বলেন– ‘ভারতে যা হচ্ছে তা হল রাষ্ট্রীয় মদদে– রাষ্ট্রীয় শক্তিতে বলীয়ান হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এক বিশেষ ধর্মের মহিলাদের সমাজের চোখে হেয় করার চেয়ে ঘৃণ্য কাজ আর হতে পারে না?। মরিশাসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব ফকিম বলেন– ভারতের সংবিধান সবদিক দিয়ে ভালো। তবু তাঁকে ভূলুণ্ঠিত হতে হচ্ছে। অ্যামনেস্টির এশিয়া অ্যাডভোকসির অধিকর্তা ক্যারোলিন ন্যাশ বলেন– ফাদার স্ট্যানস্বামীকে জেলেই মরতে হল। কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুররাম পারভেজকে ইউএপিএতে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।