সুবিদ আবদুল্লাহ
সংসারের হাল ধরতে স্কুলছুট হয়ে দিনমজুরি করছে মালদার সাহিল হোসেন। শহরের রথবাড়ি মোড়ে ফল বিক্রি করে সাহিল। তাও নিজের ব্যবসা নয়। অন্য ব্যবসায়ীর সহকারি। ফল বিক্রির ওপর মজুরি পায় সে। সংসারের হাল ধরতে দিনমজুরি করছে যদুপুরের কিশোর সাহিল হোসেন।
সাহিল জানিয়েছে– লকডাউনের বছরে সে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। নতুন স্কুল ও নতুন বন্ধু। কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তিন মাসের মধ্যেই। বছরের হিসেব ধরলে সাহিল এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ক্লাস করেছে আড়াই মাস। স্কুল খুললে ব্যবসা ছেড়ে যেতে পারবে? সাহিল জানায়– তার আর স্কুলজীবনে ফেরা হবে বলে মনে হয় না।
স্কুল টাইমে খুব মনে পড়ে সহপাঠি বন্ধুদের কথা। এ বছর নীচু ক্লাসের জন্য স্কুল খোলার কথা শুনে আনন্দ হয়েছিল। মাকে বলেছিল– সে স্কুল যাবে। পার্টটাইমে মজুরের কাজও করবে। মা-ও রাজি ছিল। কিন্তু তা আর হল কই? আক্ষেপ প্রকাশ করল সাহিল।
রথবাড়ি ফ্লাইওভারের নীচে ট্রলিভ্যানে ফলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়েছিল সাহিল। দু-বছর ধরে এই কাজ করছে সে। ওর কাছে জানা গেল– পড়াশোনা ছাড়তে চায়নি সে। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। দীর্ঘ লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়িতে ছিলেন বাবা। বাড়িতে বসে থেকে সংসার চালাতে সঞ্চিত সব অর্থ শেষ করে ফেলেছেন। আর্থিক অনটনে বাধ্য হয়েই দুই নাবালক সন্তানের টিউশনি ছাড়িয়েছেন বাবা।
সাহিল জানাচ্ছে– স্কুল বন্ধ। টিউশনিও বন্ধ। পেট তো বন্ধ নেই। অগত্যা দুই ভাই বাবার সঙ্গে দিনমজুর খাটতে বেড়িয়ে পড়ে। ফলের দোকানে কাজ নেয় সাহিল। দাদা ভিন্ রাজ্যে চলে যায়। তাও অস্থায়ী। ফলের ডালা সাজিয়ে ওকে রথবাড়ি বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়াতে হয় প্রতিদিন। দিনের শেষে যেমন বিক্রি হয় তা থেকে কোনওদিন ২৫০ টাকা– কোনওদিন ৩০০ টাকা মেলে।
স্কুলের কথা মনে পড়ে? ডালায় ফল সাজাতে সাজাতে সাহিল জানায়– স্কুল টাইমে মনে পড়ে। মনে পড়ে সহপাঠি বন্ধুদের কথা। ওদের সঙ্গে দেখা হয় কখনও কখনও। ফল কিনতে এলে। ওদের কাছে জেনেছি– ওরা সবাই টিউশনি পড়ছে। স্কুল খুললে স্কুলেও যাবে। আমার আর যাওয়া হবে না। সংসারের জন্য এই টাকাটা জরুরি। ওর কথায় সাবালকত্বের সুর বেজে উঠল। হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া সাহিল কাঁপা কণ্ঠে জানায়– মাঝে উঁচু ক্লাসের জন্য স্কুল খোলা হল। জানা গেল– জানুয়ারি থেকে অন্যান্য ক্লাসের জন্য স্কুল খোলা হবে। আশা জেগেছিল– এবার বুঝি দেখা হবে পুরনো সহপাঠি বন্ধুদের সঙ্গে। তৃতীয় ঢেউয়ে আবার বন্ধ স্কুল। দিল্লি থেকে ফিরে এলেন বাবা। আর উপায় নেই। স্কুল থেকে পাকাপাকি ছুটি হয়ে গেছে আমার। চিক চিক করে উঠল সাহিলের চোখ। কান্না চেপে রাখতে মাথা নীচু করে থাকল সে।