রক্তিমা দাসঃ শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। সেক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে পুণ্যার্থীদের টিকারণের ওপর। তার জন্য সাগরযাত্রায় আসা পুণ্যার্থীরা যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাঁদের মেলা চত্বরের অস্থায়ী শিবিরে টিকাকরণের ব্যবস্থা করেছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু সেই ব্যবস্থা কতটা কার্যকরী হয়েছে সেই প্রশ্ন বারবার উঠছে। আউটরাম ঘাটের টিকা কেন্দ্রে কিছু পূণ্যার্থী টিকা নেওয়ার জন্য হাজির চলেও আধিকারিক ছিলেন না। আবার আধিকারিক যখন এলেন তখন দেখা গেল অনেকেই ধর্মকে হাতিয়ার করে করোনা তাড়ানোর কথা ভাবছেন। বুধবার সারাদিন ধরে এমনই কিছু টুকরো টুকরো দৃশ্য ধরা পড়ল গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে।
বুধবার সকাল থেকেই বাবুঘাটে টিকাকরণ নিয়ে মাইকে সতর্কতা মূলক প্রচার চালায় পুলিশ। কিন্তু দেখা যায় সেদিকে কর্ণপাত করার কোনও ইচ্ছাই নেই পূণ্যার্থীদের। থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে দূরত্ববিধি ঘুচেছে অনেক আগেই। অর্ধেকের মুখে মাস্ক নেই। অনেকের আবার যুক্তি– পূণ্য অর্জনের মাধ্যমেই করোনা দূর করতে পারবেন তাঁরা। একইসঙ্গে বেপরোয়া অনেক সাধু। গায়ে ভস্ম– মুখে মাস্কের বালাই নেই। কখনও তা ঝুলছে কান থেকে। এক সাধুর তো সটান জবাব– ‘সাধু হচ্ছে সাদা– সাধু হচ্ছে সৎ– সাধু হচ্ছে ত্যাগের প্রতীক। সাধু হলে আবার মাস্ক– টিকা এসবের দরকার লাগে!’ আর এক সাধুর যুক্তি আরও মারাত্মক– তাঁর কথায়– ‘গঙ্গার থেকে করোনা বড় নাকি? করোনাকে তাড়িয়ে দেব প্রার্থনা করে।’
টিকাকে প্রসঙ্গে একদিকে মেলার একটি প্রান্তে যখন পুণ্যার্থীদের মধ্যে এরকম উদাসীন দৃশ্য– বুধবার সেই সময় মেলার আরেক প্রান্তে দেখা গেল টিকা কেন্দ্রে আধিকারিকদের উদাসীনতা। কিছু পূণ্যার্থী টিকা নিতে ঘাট চত্বরে কলকাতা পুরসভার টিকা কেন্দ্রে হাজির হলেও আধিকারিকের দেখা পেলেন না। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর না থাকায় টিকা নেওয়ার জন্য টানা তিন অপেক্ষা করতে হল পূণ্যার্থীদের। এমনকী– দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই আধিকারিকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। এরপর পুরসভায় যোগাযোগ করে গোটা ঘটনাটি জানানো হলে অন্য আরেক আধিকারিককে পাঠানো হয়। টানা ৩ ঘণ্টা পর আউটরামের ঘাটে মেলার মাঠে টিকাকরণের কাজ শুরু হয়। সব মিলিয়ে প্রথম দিনই হোঁচট খায় গঙ্গাসাগর মেলায় টিকারণের প্রক্রিয়া।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়– মেলায় যে পুণ্যার্থীরা যাবেন তাঁদের প্রত্যেকের দুটি টিকাগ্রহণের শংসাপত্র থাকতে হবে। টিকার শংসাপত্র না থাকলে আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হবে। যদি কোনও পুণ্যার্থী করোনা টিকার কেবল একটি ডোজ পেয়ে থাকেন তবে তাঁকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা শিবিরেই করতে হবে। কিন্তু– কার্যত বুধবার দেখা গেল– সম্পূর্ণ ছবি টা উল্টো। শিবির থাকলেও আধিকারিক না থাকায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় পূণ্যার্থীদের। অন্যদিকে– অনেককে টিকা কেন্দ্র মুখীই করা গেল না। ফলে টিকাকরণের ক্ষেত্রেই যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়– তাহলে সবদিক বজায় রেখে কিভাবে মেলা চালানো সম্ভব হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।