নয়াদিল্লি : বেঞ্চের কোনও বিচারপতিকে ‘আক্রমণ’ করা হলেও তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন না। এমনকি সেই আক্রমণ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হলেও। তবে অবসর নেওয়ার পর বিচারপতিরা প্রয়োজন পড়লে তা করতে পারেন। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডির বিদায়ী অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের করেছিল। রামানা সেখানে বলেন, অবসর নেওয়ার অর্থ হল ‘পুনরায় স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া’। কারণ, তাঁর মতে, অবসর নেওয়ার পর বিচারপতির উপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠে যায় এবং তিনি নিজের মতামত স্বাধীন ও খোলামেলাভাবে প্রকাশ করতে পারেন। প্রসঙ্গত, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণে’র কোনও উদাহরণ রামানা না দিলেও সবাই জানেন যে, অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি ২০২০ সালের অক্টোবরে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তাঁকে। জগনের দাবি ছিল, এন চন্দ্রবাবু নাইডুকে সুবিধা করে দিতে রামানা তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। যদিও তদন্তের পর জগনের এই দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। যাইহোক, বিদায়ী বিচারপতির ভূয়সী প্রশংসা করেন রামানা। তিনি বলেন, মানুষের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার দিকে বিশেষ নজর ছিল বিচারপতি রেড্ডির। সেই সঙ্গে সমাজ-বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি ছিলেন সচেতন ও সহমর্মী। অনুরাধা ভাসিন, ফাউন্ডেশন অফ মিডিয়া প্রফেশনাল এবং শাহ ফয়জল বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার মামলার সময় বিচারপতি অভূতপূর্ব বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন রামানা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে আইনের বহু স্পর্শকাতর প্রশ্ন নিয়ে বোঝাপড়া করেছেন এবং একশোর বেশি রায় দিয়েছেন বিচারপতি রেড্ডি। আইনে তাঁর দক্ষতা ও মতামত থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বিদায়ী বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত হওয়ার আগে আইনজীবী হিসাবে ট্রাইবুনাল, সিভিল আদালত, অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে কাজ করেছেন। নানা বিষয়ে তাঁর অবাধ গতায়াত। সিভিল, ক্রিমিনাল, সাংবিধানিক, রাজস্ব, আয়কর, শ্রম, কোম্পানি, পরিষেবা–নানা ক্ষেত্রে তিনি সাফল্যের সঙ্গে কর্ম সম্পাদন করেছেন। বিচারপতি রেড্ডি তাঁর বিদায়ী ভাষণে বলেন, বর্তমান সমাজের কথা মাথায় রেখে বিচারব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। বহু মামলা দীর্ঘদিন ধরে আদালতে ঝুলে থাকার ফলে মানুষকে হয়রান হতে হয়, তাই এই সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিচারপতি রেড্ডি এর একটা সমাধান সূত্রও দিয়েছেন। তাঁর মতে, হাইকোর্টের উপর যদি কোনও আপিল করার আদালত থাকে তাহলে কিছুটা হলেও ঝুলে থাকা মামলার সমস্যা মিটতে পারে। প্রধান বিচারপতি রামানা ও বিচারপতি রেড্ডি ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও এসসিবিএ সভাপতি বিকাশ সিং।