পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আফগান ভাই-বোনেরা এখন চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। মুসলিম দেশগুলির উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আফগানস্তিান নিয়ে অতি জরুরি এক বৈঠকে পাকিস্তানে উপস্থিত হয়ে এই ঘোষণা দিলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের সেক্রেটারি জেনারেল হুসেন ব্রহমি তাহা। ওআইসির এই বৈঠকের আয়োজন হয়েছে পাকিস্তানে। ওআইসি সদস্যভুক্ত ৫৭টি দেশের বিদেশমন্ত্রী আফগানিস্তান নিয়ে জরুরি বৈঠক করবেন রবিবার। আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি শনিবার ইসলামবাদ পৌঁছেছেন।
রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকের পর তালিবানের অধীন আফগানিস্তান নিয়ে এত বিশাল আয়োজন এই প্রথম। এই বিশেষ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আমেরিকা– ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাপান– রাশিয়া– জার্মানির প্রতিনিধিকে। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার প্রতিনিধিগণ। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা আইডিবির প্রেসিডেন্ট ডা. মুহাম্মদ আল জাসের ইসলামাবাদ পৌঁছেছেন এবং আফগানিস্তানকে যথাসম্ভব সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ডা. জাসের বলেন– ওআইসি আফগানিস্তান নিয়ে এই বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করল।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই বৈঠকে মুসলিম দেশ ছাড়াও পর্যবেক্ষক হিসেবে অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ৪০ বছর পর ওআইসির এই ধরনের অতি জরুরি বৈঠক আর আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে উচ্ছ্বসিত পাকিস্তান। ১৮– ১৯– ২০ ডিসেম্বর তিনদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। নিরাপত্তার জন্য ইসলামাবাদে সব ধরনের পাবলিক ট্রান্সপোর্টও বন্ধ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য– সউদি আরবের উদ্যোগে এই বিশেষ বৈঠকের আয়োজন পাকিস্তানে। সউদি আরবের দুই প্রতিনিধি শুক্রবার ইসলামাবাদ পৌঁছেছেন। এসেছেন আমেরিকার বিশেষ দূত থমাস বেস্টও।
যেহেতু তালিবানের সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি– সেকারণে রাষ্টÉসংঘের বৈঠকে তালিবান প্রতিনিধির উপস্থিতি ছিল না– কিন্তু ওআইসির এই বৈঠকে তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী মুল্লা আমির খান মুত্তাকী অংশগ্রহণ করছেন। এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য– ২০১৯ সালে আবুধাবিতে ওআইসির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে বিশেষ দূত ও সম্মানীয় মেহমান হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আমীরাতের পক্ষ থেকে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেই বৈঠকে প্রায় ৫০ বছর পর।
১৯৬৯ সালে ওআইসি ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাবাতের বৈঠকে। ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠায় ভারত সেই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনি। তবে সুষমা স্বরাজের অংশগ্রহণের পর ওআইসি সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মধুর হতে থাকে। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধিবাসীর দেশ। তাই ভারতের প্রতিনিধি থাকার দাবি ওঠে।
আফগানিস্তান নিয়েও ভারত ইতিমধ্যে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে কাবুলে এবং তালিবান নেতারা ভারতের মানবিক মদদের প্রশংসাও করেছেন। তাই ইসলামাবাদের ওআইসি বৈঠক ভারতের কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা না গেলেও আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের ভূমিকাও ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই বিশাল আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভিভাবক সাজার বাসনায় কতটা অগ্রসর হয়– সেদিকেও অবশ্যই নজর থাকবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের।অবশ্য রবিবার মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই বৈঠকে আফগান সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।