নয়াদিল্লি: প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার ডাকে বিপুল লোক জড়ো হয়েছিল বুধবার। সেখানে হাজির ছিলেন বুকার প্রাইজ জয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় সহ আরও বহু সমাজকর্মী। সিএএ-বিরোধী আন্দোলন চলাকালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়াদের উপর পুলিশি হামলার পর দুই বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সেই সময়কে স্মরণ করে একটি প্রেস কনফারেন্স করেন তাঁরা। বর্বর পুলিশি আক্রমণের স্মৃতি যাতে মানুষের মন থেকে মুছে না যায় তার অনুরোধ করেছেন বিশিষ্টরা। সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে সমালোচনা করে বক্তারা দাবি তোলেন যে, জামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল এবং যে পুলিশরা এই জঘন্য কাজ করেছিল তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত। অরুন্ধতী রায় ছাড়াও এই প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ফারাহ নকভি, রাধিকা চিতকারা, ফাওয়াজ শাহীন, নদীপ কৌর, বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী, ফারজানা ইয়াসমিন। ছিলেন ছাত্র নেতা আখতারিস্তা আনসারি ও অনুজ্ঞা ঝা। এই অনুষ্ঠানে ফারাহ নকভি বলেন,”বিস্মৃতির রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। আমরা বলব এবং আমাদের বলতেই হবে।” সেই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সত্যানুসন্ধানী দল ও সাংবাদিকদের গুরুত্বকে আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। নকভি বলেন, কেন্দ্র যখন সত্যানুসন্ধানী রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করেছিল তখন সত্যকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ করেছিল তারা। সিএএ ও এনআরসিকে হিটলারের নুরেমবার্গ আইনের সঙ্গে তুলনা করেছেন ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’-এর লেখিকা অরুন্ধতী রায়। এই আইন মুসলিম ও দরিদ্র-বিরোধী। তিনি বলেন,”এই আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বলেই জামিয়া, এএমইউ ও জেএনইউ-এর পড়ুয়াদের আক্রমণ করা হয়েছিল। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি দখল করে নিয়েছে আরএসএস।” প্রসঙ্গত, কুখ্যাত নুরেমবার্গ আইনের মাধ্যমে ইহুদিদের কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন হিটলার। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের সমস্ত অধিকার। যাইহোক, পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটসের (পিইউডিআর) সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী রাধিকা চিতকারা অভিযোগ করেন যে, জামিয়ার পড়ুয়া ও পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষদের ব্যাপক ক্ষতি করার লক্ষ্যে বিশাল বাহিনী ব্যবহার করেছিল পুলিশ। ১৫ ডিসেম্বরের রাত্রির ভয়াবহ তাণ্ডবের কথা স্মরণ করেন ফাওয়াজ শাহীন। সেই রাতে জামিয়া ও এএমইউ ক্যাম্পাসে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে পুলিশ। আহত পড়ুয়াদের চিকিৎসার জন্য শাহীনরা যখন দৌড়চ্ছিলেন তখন বাধা দেয় উর্দিধারীরা। তিনি বলেন,”আমরা দেখলাম বাইরে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের বিপুল বাহিনী এবং ক্যাম্পাসের ফটক মেঝেতে লুটোচ্ছে। বিশ্বাস করুন, এত থমথমে জায়গা আগে কখনও দেখিনি। গাঢ় নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল সেখানে।” আনসারি বলেন,”সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আমি জামিয়াকে নিয়ে গর্বিত। আমরা দেখিয়েছি কীভাবে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা গর্জে উঠতে পারে।” এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, জেলে পুরে বা ইউএপিএ ধারা চাপিয়ে দিয়ে তাঁদের চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে না। আসিফ ইকবাল ও সাফুরা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দিল্লি হিংসার ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁদের ইউএপিএ ধারায় আটক করা হলেও পরে জামিন পেয়েছেন। এই আসরে উঠে এসেছে শার্জিল ইমামের কথাও। রাস্তা আটকানোর ডাক দিয়েছিলেন এই ছাত্র নেতা এবং তারপরই শাহীন বাগে ধর্না শুরু হয়। তাঁকে শাহীন বাগ আন্দোলনের ‘মাথা’ হিসাবে দেখা হচ্ছে। আনসারির বক্তব্য,”আমাদের মনে রাখা উচিত, যে মডেলে আন্দোলন করে কৃষকরা সফল হয়েছেন সেই মডেল নিয়ে আসার জন্য শার্জিল ইমাম এখনও জেলে।” দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রেফতার করা হয় ফারজানা ইয়াসমিনের ভাইকে। ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো’ সকল সমাজকর্মীর মুক্তির দাবি তুলেছেন ফারজানা। শ্রম অধিকার কর্মী নদীপ কৌর সবাইকে ঐক্যবদ্ধে হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জামিয়া ও এএমইউ-এর উপর হামলাকে ‘হতাশার শীত’ ও শাহীন বাগের ধর্নাকে ‘আশার বসন্ত’ বলে অভিহিত করেছেন সমাজকর্মী বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী।