পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ভারতের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাট যুগ শেষ। এবার শুরু হতে চলেছে রোহিত যুগের। এখন প্রশ্ন উঠেছে বিরাট কোহলি কে কি বিসিসিআই সরিয়ে দিল, নাকি বিরাট কোহলি নিজে থেকেই সীমিত ওভারের ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরে গেলেন? কারণ বিসিসিআই তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর এটা কোথাও উল্লেখ করেনি, যে বিরাট কোহলিকে সরিয়ে দেওয়া হল।
বিসিসিআই শুধু জানিয়েছে, সীমিত ওভারের জন্য নতুন ক্যাপ্টেন নির্বাচিত করা হল রোহিত শর্মাকে। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে বিরাট কোহলিকে অধিনায়ক হিসেবে আর দেখতে চাইছিলেন না অনেকেই। তাই তার মতো সাজানো গুছোনো ক্যাপ্টেনকে সরিয়ে নতুন অধিনায়ক হিসেবে নিয়ে আসা হল রোহিত শর্মাকে। এর কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। গ্রুপ স্টেজ থেকেই ভারতের বিদায় নেওয়ায় অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির উপর অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে যে বিরাট কোহলিকে সরানোর জন্য বেশ কয়েকবছর ধরেই একটা রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহলি নিজেই সে রাস্তাটা তৈরি করে দিলেন।
বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ৪৮ ঘন্টা আগে বিরাট কে জানানো হয়েছিল তিনি সীমিত ওভারের ক্যাপ্টেন্সি ছাড়বেন কি না ? কিন্তু বিরাট তার নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান নি। তিনি বরং কিছুটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন তিনিই থাকছেন। ২০২৩ সালে একদিনের বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে। সেই বিশ্বকাপে নিযুক্তি ভারতীয় ক্যাপ্টেন হিসেবে তুলে আনার মরিয়া লক্ষ্যে ছিলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু বুধবার ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আর বিরাট ক্যাপ্টেন নন, সীমিত ওভারের ব্যাটন এবার যাচ্ছে রোহিত শর্মার হাতে।
আসলে বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। কোহলি নিজের মতন একটা দল তৈরি করে ফেলেছিলেন। এটা শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে হেল্প করতে পারত। যারা বিরাটের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এরপরে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের ট্র্যাডিশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফিরে আসে। যেখানে একজন কড়া সচিব এবং কড়া সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। যিনি নিজেও একসময় দারুণ সফল একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকে দেখেও ভারত অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করছে। বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও চাইছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই ক্যাপ্টেন থাকুন। তাছাড়া মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্রিকেটার ছাড়া ভারতীয় টিমের ড্রেসিং রুমও ধীরে ধীরে বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছিল। একদিনে এটা মোটেও সম্ভব হয়নি।
বিরাটের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো সবাইকে বিশ্বাস না করতে পারা। তিনি চিরকালই স্পষ্টবাদী, কিন্তু সেটাই তার কাল হয়েছে। যোগাযোগের অভাবে দলের অন্দরেই তিনি নিজের সম্মান হারিয়েছেন। যদিও দলের প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন তার ব্যাটিংয়ে আরো বেশি মন দেবার জন্য। অনেক সময়ই বিরাট অনেকের কথাই শোনেননি। যেমন অনিল কুম্বলে। ব্যাটসম্যান হিসেবে হয়তো বিরাট পারফর্ম করে গিয়েছেন, ক্যাপ্টেন হিসেবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কোথাও একটা তার দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই বিরাটের অনেক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলের অন্দরের প্লেয়াররাই। যেমন ছন্দে থাকা সত্ত্বেও কুলদীপ যাদবকে আনা-নেওয়া নিয়ে বিরাটকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। শুধু কুলদীপ অনেক প্লেয়ারই জানতেন না তাদের ভূমিকা ঠিক কি?
তাছাড়া দলের প্লেয়ারদের কাছে প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনি যেমন খোলা মনে মিশতে পারতেন, বিরাট ততটা নন। হোটেলে ধোনির রুমের দরজা সবার জন্যই খোলা থাকত। প্রত্যেক ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রত্যেক প্লেয়ারের একটা বন্ডিং ছিল। কিন্তু বিরাট আমলে সেই বন্ডিংটা কোথাও যেন লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার বিরাট কোহলির স্নেহভাজন হলেও বেশিরভাগ তরুণ ক্রিকেটার রোহিত শর্মার দিকে ঝুঁকেছেন। তার কারণও আছে। যদি কোন ক্রিকেটার পঞ্চাশের কম রান করেন, তাকে ডেকে এনে খাবার টেবিলে বসানোর দায়িত্বটা নিয়ে নেন রোহিত শর্মা। আর এটা বলেন,’চিন্তা করো না আমি তোমাদের সঙ্গে আছি ।’ এটাই বোধহয় রোহিত শর্মার ইউএসপি। বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। তাই বিরাটকে সরিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রোহিত শর্মাকে ক্যাপ্টেন্সি তুলে দেবার দায়িত্বটা খুব একটা অসমীচীন নয়।
এটাও দেখার, একটা নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি দুজনেই। অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়কহীন হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খেলবেন বিরাট কোহলি। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে। পাশাপাশি আবার টেস্ট ক্রিকেটে বিরাটের ক্যাপ্টেন্সিতে খেলবেন রোহিত শর্মা এবং বাকি ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কতটা মনোযোগ সহকারে বিরাট সেখানে খেলতে পারেন, সেটাই এখন দেখার। ওয়ানডে ক্রিকেটে দলের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বিরাট কোহলির। টেস্ট ক্রিকেটেও কি থাকবে? এটা একটা বড় জিজ্ঞাস্য। পাশাপাশি এটাও মেনে নিতে হচ্ছে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাট যুগ শেষ হয়ে শুরু হতে চলেছে রোহিত যুগ।