পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ নাগাল্যান্ডে অসম রাইফেলস-এর গুলিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপরে গুলি চালনার ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এই ঘটনায় উত্তাল সংসদ। নাগাল্যান্ডে ১৪ গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় আজ সংসদে বিবৃতি দেবেন অমিত শাহ। আজ বিকেল ৩ টেয় লোকসভায় ও বিকেল ৪ টেয় রাজ্যসভায় স্বত:প্রণোদিত বিবৃতি দেবেন শাহ।
এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দেবেন বলে জানানোর পরও বিরোধীরা দাবি করেন, অধিবেশনের শুরুতেই বিবৃতি দেওয়া উচিৎ ছিল। লোকসভায় এ দিন নাগাল্যান্ডে ১৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনার জেরে একাধিক দলের তরফে লোকসভায় নোটিশ দেওয়া হয়। তৃণমূল, কংগ্রেস, আরজেডি সব দলই নোটিস দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তের আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ট্যুইট করে ওই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে তদন্ত করবে। বিচার পাবে মৃতদের পরিবার।
এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে শোকজ্ঞাপন করেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও। ঘটনার দিনই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ট্যুইটে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় মন জেলার ওটিং-এ গ্রামবাসীদের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত নিন্দাজনক ঘটনা। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। সিট গঠন করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে, আইন মেনে বিচার হবে। প্রত্যেকের কাছে শান্তিরক্ষার আবেদন জানাচ্ছি।’
এই ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই এফআইআর হয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। এফআইআরে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় কোনও পুলিশ উপস্থিত ছিল না। সেনার দাবি করা হয়েছে, গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই অনুপ্রবেশ রুখতে মন জেলার তিরু এলাকায় অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
কি হয়েছিল সেদিনঃ ওটিং গ্রামের কয়লা খনির শ্রমিকেরা তিরু থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। বোলেরো পিক আপ গাড়িতে ফিরছিল তারা। আফার তিরু ও ওটিং গ্রামের মধ্যবর্তী লংখাও এলাকায় গাড়িটি পৌঁছনোর পরই গুলি চালাতে শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। আর তাতেই একাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
সপ্তাহ শেষে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফেরা আর হল না। অসম রাইফেলসের গুলি চিরকালের মতো থামিয়ে দিল তাঁদের। বেঘোরে প্রাণ গেল ১৪ জনের।
উল্লেখ্য, রাজ্যে এখন চলছে ঐতিহ্যবাহী ‘হর্নবিল উৎসব’। সেখানে একাধিক পদস্থ আমলারাও উপস্থিত হচ্ছেন। কোন্যাক প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা এই উৎসব বয়কট করছেন। একই কথা ঘোষণা করেছে আরও ৬টি উপজাতি সম্প্রদায়ও। এক কোন্যাক নেতার প্রশ্ন, ‘যখন আমাদের লোকদের খুন করা হচ্ছে তখন আমরা কীভাবে উৎসবে গিয়ে নাচতে পারি?’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে গোপন সূত্রে খবর আসে অসম রাইফেলসের কাছে। সেইমতো মায়ানমার সীমান্তে মোন জেলায় তারা অভিযান চালাতে শুরু করে। সেইসময় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুপ্রবেশ রুখতে মন জেলার তিরু এলাকায় অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল সেনা। গত কয়েকদিন ধরেই তারা ওই এলাকায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল। সেইমতো ওইদিন মন জেলার তিরু গ্রামে তারা অভিযান চালায়। জঙ্গি সন্দেহে তারা গুলি চালায়। আর তাতেই প্রাণ হারান একাধিক গ্রামবাসী।
যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, নাগাল্যান্ড– মণিপুর– অরুণাচলপ্রদেশ– মিজোরাম– অসম ও মায়ানামারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন নাগা ভূমি বা ‘নাগালিম’ গড়তে বহুদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন।
সংগঠনটি পরে ভাগ হয়ে যায়। তাদেরই ভাগ হয়ে যাওয়া এনএসসিএন (আইজ্যাক-মুইভা) গোষ্ঠীর সঙ্গে সমস্যা সমাধানে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র। অপর অংশটি এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই আন্দোলন দমন করতেই ওই এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিল অসম রাইফেলস। সেই সময় এই ঘটনা ঘটে।
এ দিকে এই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা পালটা সেনাবাহিনীর টিমকে ঘিরে ফেলে। তখন ফের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। উত্তেজিত জনতা তাদের একটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। যদিও অসম রাইফেলসের দাবি, তাদের এক জওয়ান ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। কয়েকজন জখমও হয়েছেন।