উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: সুন্দরবনের যোগাযোগের সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের রেলপথ সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করেন। সেইমত কাজও শুরু হয়। পর্যটন মানচিত্রে সুন্দরবনের আলাদা একটা ভূমিকা আছে আর তাই সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার ক্যানিং থেকে ঝড়খালি পর্যন্ত প্রায় ৪১ কিমি রেলপথ সম্প্রসারনের কথা তিনি তখন ঘোষণা করেন। আর সুন্দরবনের রেল পথ সম্প্রসারণের জন্য ক্যানিংয়ের মাতলা নদীর ওপর রেল সেতুর কাজ শুরু হয়। এর জন্য মাতলা নদীর ওপর বেশ কয়েকটি পিলার তৈরি করা হয়। তারপরে এখনো পর্যন্ত ওই পিলারের মাথার উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিলারের উপর থেকে আর কাজ এগোয়নি। থমকে গেছে এই কাজ।
রেল দফতর সুত্রে জানা গেল, ক্যানিং থেকে বাসন্তী ঝড়খালি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের সার্ভের কাজ ইতিপূর্বে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার ফলে এই বৃহৎ প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে রেল দফতর সূত্রে জানা গেল। তবে রেলের তরফ থেকে এরকম কোন নির্দেশিকা জেলা পরিষদে আসেনি বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেমবর বাসন্তীর কুলতলিতে তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য লোকমান মোল্লার আয়োজনে সুন্দরবন কৃষটি মেলায় আগত তৎকালীন ভারতের লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সুন্দরবনের রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য সুন্দরবনবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন পত্র তুলে দেন লোকমান মোল্লা।
২০০৮ সালের ২ জানুয়ারী তৎকালীন ভারতের রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের কাছে এ বিষয়ে অবগত করেন সোমনাথবাবু। তাঁর পরে ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১ ম পর্যায়ে ক্যানিং থেকে ভাঙনখালি ও তাঁরপরে ২য় পর্যায়ে বাসন্তীর ঝড়খালি পর্যন্ত রেল পথ সম্প্রসারণের শিলান্যাস করেন। তিনি এর জন্য পরবর্তী রেল বাজেটে অর্থ বরাদ্দও করেন। তারপরে মাতলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরুও হয়। এই কাজের জন্য প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা অনুমোদন পায়। তবে মাতলা নদীর উপর শুধুমাত্র ২২ টি পিলারের খুঁটি তৈরি ছাড়া গত ১২ বছরের আর কোন কাজে অগ্রগতি হয়নি। যদিও ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই রেল দপ্তরের তরফ থেকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয় মাতলা নদীর উপরে রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাসন্তীর বর্তমান বিধায়ক তথা প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী শ্যামল মন্ডল বলেন, কেন্দ্রের গাফিলতিতেই বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা, বঞ্চিত হচ্ছে সুন্দরবন। এই রেল সেতু প্রকল্পের জন্য মাত্র এক টাকা ধার্য করা হয়েছে যাতে করে এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় সেই চেষ্টায় কেন্দ্র সরকার করছে। রাজ্যের উন্নয়ন তাঁরা চায় না।
এই রেল পথ নিয়ে সবচেয়ে বেশি যিনি কাজ করছেন তিনি হলেন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা সুন্দরবনের ভূমিপূএ লোকমান মোল্লা। তিনি বলেন, এই রেলপথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রেল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে আসছি। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এ নিয়ে রেল দপ্তরে যোগাযোগ করেছিলাম। আবার আমি এ নিয়ে রেল মন্ত্রীর সাথে দেখা করব।
দ্রুত রেলপথ সম্প্রসারনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এবছর ১৭ ফ্রেব্রুয়ারী একটি গন কনভেনশনও করা হয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে। এই রেল পথ তৈরি হয়ে গেলে এবং রেল পরিষেবা চালু হয়ে গেলে সুন্দরবনের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়ে যাবে। দেশের মানচিত্রে সুন্দরবন আলাদা জায়গা পাবে। তাই সুন্দরবনবাসী দের পক্ষ থেকে আমরা চাই এখানে দ্রুত রেলপথ সম্প্রসারন করা হোক। নাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব বলে তিনি জানান।