পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : শেষ পর্যন্ত কৃষি আইন প্রত্যাহারে কার্যত বাধ্য হল মোদি সরকার। গুরু নানকের জন্মদিনে এই ঘোষণা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আইন প্রত্যাহারের পরই আন্দোলনরত কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘এবার আপনারা বাড়ি ফিরে যান।’ প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই এই তিনটি বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরেই নানা বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছিল তিন কৃষি আইনকে ঘিরে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ হল, কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া মোদি সরকারের হাতে আর কোনও উপায় ছিল না। নয়া দল গড়েছেন অমরিন্দর।এতদিন যে কাজ আকালি করে আসছিল, এবার থেকে সেই কাজ করবে অমরিন্দরের দল। তবে কৃষি আইন প্রত্যাহার না হলে অমরিন্দরও হালে পানি পাবেন না। ফলে কংগ্রেসের ভোটব্যাংকে ফাটল ধরানোর যে কাজ বিজেপি করবে বলে মনে করছে তা সফল হবে না। তাই এতদিন প্রায় ৭৫০ কৃষকের আত্মাহুতির বিনিময়ে শেষে এই কালাকানুন প্রত্যাখ্যান করল কেন্দ্র।
এক পলকে দেখে নেওয়া যাক কৃষি আইনের সময় সারণী
জুন ২০২০: তিন কৃষি আইনের প্রস্তাব কেন্দ্রের। শুরুতেই এই তিন বিলের প্রতিবাদ করে ভারতীয় কিষান মোর্চা। তাদের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করা হয়, এর ফলে ফসলের এমএসপি তথা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থার অবসান হবে। তা নিয়ন্ত্রণ করবে বড় সংস্থাগুলি।
সেপ্টেম্বর ২০২০: সংসদে পেশ করা হল কৃষি বিল। লোকসভায় তা পাশ হওয়ার পরে তা রাজ্যসভাতেও ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায়। যাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে পাঞ্জাবের কৃষকরা। তাঁরা তিন দিনের ‘রেল রোকো’ শুরু করেন।
অক্টোবর ২০২০: নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে বেশ কিছু পিটিশন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চায় শীর্ষ আদালত। নয়া আইনের প্রতিবাদে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং।
নভেম্বর ২০২০: গোটা দেশে শুরু হয় কৃষি আইন বিরোধী বিক্ষোভ। ২৫ নভেম্বর দিল্লি অভিযানের ডাক দেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। কিন্তু রাজধানীর সীমান্তে তাঁদের আটকে দেয় দিল্লি পুলিশ। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস, জলকামান।
২৮ নভেম্বর ২০২০: : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কৃষকরা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
২৯ নভেম্বর ২০২০ : ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি কৃষকদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পালন করেননি। কিন্তু তাঁর সরকার কথা রেখেছে।
ডিসেম্বর ২০২০: ৩ ডিসেম্বর প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠকে বসতে দেখা গেল কৃষক পক্ষ এবং কেন্দ্রকে। দুকিন্তু রফা সূত্র রইল অধরাই।
৮ ডিসেম্বর২০২০: ভারত বন্ধের ডাক দিলেন কৃষকরা। ফেরালেন আইন সংশোধনের প্রস্তাব।
১১ ডিসেম্বর ২০২০: তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন।
জানুয়ারি ২০২১: ১২ জানুয়ারি তিন কৃষি আইন বলবৎ করায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ জানুয়ারি ২০২১: সাধারণতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বিক্ষোভকারীদের। লাল কেল্লায় নিশান সাহিবের পতাকা উত্তোলন করে বিক্ষোভকারীরা। মৃত্যু হয় এক বিক্ষোভকারীর।
ফেব্রুয়ারি ২০২১: মার্কিন পপ তারকা রিহানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের মতো পশ্চিমের সেলেব্রিটিরা কৃষক আন্দোলন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন। গ্রেটার বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিল্লি পুলিশ।
মার্চ ২০২১: ৫ মার্চ পাঞ্জাবের বিধানসভায় রাজ্য থেকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাশ হয়।
মে ২০২১: ২৭ মে কৃষকদের বিক্ষোভের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ায় কালা দিবস পালন করলেন কৃষকরা।
জুলাই ২০২১: ২২ জুলাই সংসদের বাদল অধিবেশ শুরুর দিনেই দিল্লির যন্তর মন্তরে শুরু হল কিষান সংসদ। সেখানে সমান্তরালভাবে বাদল অধিবেশনে কৃষি আইন প্রত্যাহার আন্দোলন নিয়ে বৈঠক করলেন কৃষকরা।
আগস্ট ২০২১: ৭ আগস্ট কিশান সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের ১৪টি বিরোধী দলের নেতা। ২৮ আগস্ট হরিয়ানার কার্নালে কৃষকদের উপরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
অক্টোবর ২০২১: ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রর দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু চার কৃষকের। ঘটনায় মৃত্যু হয় আর চারজনের।
১০ অক্টোবর ২০২১ :অভিযুক্ত আশিসের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ।
নভেম্বর ২০২১: ১৯ নভেম্বর অবশেষে কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের।