সফিকুল ইসলাম (দুলাল ), বর্ধমান: আরব সাগরের তীরে অবস্থিত ছোট দেশটিতে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন বরাবরই ছিল বর্ধমানের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আবদুল লতিফের। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিশ্বের এক নম্বর তালিকাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাটুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সঙ্গে যৌথ সহযোগিতায় তৈরি আবুধাবির খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রিসার্চের সুযোগ পাওয়ার পথটি বাস্তবে সহজ ছিল না। এই কৃতী গবেষকের গবেষণায় সাফল্য এবং আগামীদিনের গবেষণার নতুন অনুসন্ধানিক চিন্তাভাবনা তাকে, এই সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট পদে যোগদানে সাহায্য করেছে।
লতিফের বাবা আবদুস শরীফ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ এবং বড় ভাই ঝাড়খণ্ডের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে কর্মরত। লতিফ তার ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই ছিলেন মেধাবী। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে যে, বর্ধমানের মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে ভাল ফলসহ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি চলে যান খলতপুরের আল আমীন মিশনে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি আইআইটি পরিচালিত অল ইন্ডিয়া গেট পরীক্ষায় পাশ করে আগরতলার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তবে এই কৃতী গবেষকের যাত্রা এখানেই থেমে যায়নি। দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং পরিশ্রম দ্বারা তিনি এই বছর নভেম্বর মাসে তার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি সমাপন করেন। তার পিএইচডি থিসিস এর বিষয় ছিল “ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্ড ভোল্টেজ কন্ট্রোল অফ রিনিউঅ্যাবেল এনার্জি বেসড মাইক্রোগ্রিড”, যা পৃথিবীর বিভিন্ন সনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
আল আমীন মিশনের এই কৃতী প্রাক্তনের গবেষণার কাজ ২২ টি জার্নাল, ৩ টি বই পরিচ্ছেদ এবং ৪ টি কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়েছে। লতিফের সাফল্য এখানেই সীমিত থাকেনি। ২০১৯ সালের জার্মানির সেরা ড্যাড স্কলারশিপ পান এবং পরবর্তীকালে তিনি ‘অ্যাওয়ার্ড ফর রিসার্চ এক্সিলেন্স’, ‘ইয়াং সায়েন্টিস্ট’ সম্মানে ভূষিত হন।
এছাড়াও তিনি তার পিএইচডি চলাকালীন জাপানের ‘ফুকুশিমা রিনিউঅ্যাবেল এনার্জি ইন্সটিটিউট’ থেকে ছয়মাসের প্রজেক্টের কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এর পাশাপাশি তিনি বিশ্বের বিভিন্ন সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন জাপানের ‘ফুকুশিমা রিনিউঅ্যাবেল এনার্জি ইন্সটিটিউট’, ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর’, ‘কাতার ইউনিভার্সিটির’ সঙ্গে যৌথ গবেষনার কাজ করে চলেছেন।
আগামী ডিসেম্বর মাসে তিনি আবু ধাবীর বিখ্যাত খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট পদে যোগদান করতে চলেছেন। তার গবেষণার বিষয় হল ‘ সাইবার সিকিউরিটি ইন ইলেকট্রিক্যাল মাইক্রোগ্রিড’।
লতিফের পিতা আবদুস শরীফ বলেন, “ছেলের সাফল্যে আমরা খুবই আনন্দিত, ছেলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করুক, আগামী প্রজন্মের পথনির্দেশক হোক, আমরা পাশে রয়েছি”। আবদুল লতিফ বলেন, “তিনি তার সাফল্যের জন্য তার মা, বাবা এবং বড় ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ”। একইসঙ্গে তিনি তার পিএইচডি গাইডের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। তার রিসার্চ গাইড ডক্টর দুলালচন্দ্র দাস এই প্রতিবেদককে জানান, “গবেষণায় কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় তার সাফল্যের পথ সুগম করেছে”। লতিফের এই সাফল্যে তিনি খুবই গর্বিত।