পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ একদিকে গুরু নানকের জন্মদিন আর অন্যদিকে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির প্রয়াণ দিবসের দিনে হঠাৎ-ই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঘোষণা থেকেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আবার নিজের ক্ষেতে ফিরে যান। চলুন আবার নতুন করে শুরু করা যাক। এই মাসে শুরু হতে চলা সংসদ অধিবেশনে এই কৃষি আইন প্রত্যাহার করব। শীঘ্রই আইন প্রত্যাহারের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া পূর্ণ করে দেব।’
এক বছর আগে যখন তিন কৃষি আইনের কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এর পর সেই বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের দাবি তুলে ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা জুড়ে আন্দোলন শুরু করে পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে হাজার হাজার কৃষক। বলা যায় শীতের সময়ে কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেছে কৃষকরা। কোনও হুমকিই তাদের টলাতে পারেনি। কৃষকরা নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলন চলাকালীন প্রায় ৬০০ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাহক্টর চালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কৃষক৷ যা পরবর্তীতে বিক্ষোভের রূপ নিয়েছিল। অশান্ত হয়েছিল রাজধানী। সেই সময় কৃষকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীর তকমা জুড়ে দেয় কেন্দ্র।
এমনকী এই আন্দোলনের পিছনে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত আছে, এই মন্তব্য করে কৃষকদের তুলোধোনা করতে ছাড়েননি হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার। রয়েছে লখিমপুরের ঘটনা। উত্তরপ্রদেশে কৃষি আইনের প্রতিবাদে একজোট হয়েছিলেন কৃষকরা৷ সেই সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপুত্রের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন ৪ কৃষক৷ যা নিয়ে উত্তাল হয় গোটা দেশ।
বলা যায় আজ কেন্দ্রের মোদি সরকারের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক বছর আগে নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, আজ সেই আওয়াজের জয় হল।
এদিকে সামনে ২০২২ সালে পাঁচরাজ্যে নির্বাচন। সেই রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ। কৃষি আন্দোলনের একটা বড় অংশের কৃষক এই দুটি রাজ্য থেকে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালে বিশাল জয় নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার তৈরি করে বিজেপি। প্রায় ৫ বছর শাসনকাল পূর্ণ করতে চলেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ২০২২ সালের শুরুতেই সেখানে বিধানসভা ভোট। ইতিমধ্যে ভোট যুদ্ধে শান দিতে ময়দানে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
উত্তরপ্রদেশে কীসের ভিত্তিতে ভোট দেবে জনতা। সেব্যাপারে সমীক্ষা বলছে, দুর্নীতি, বেকারত্ব, করোনা, মূল্যবৃদ্ধি সহ একাধিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই রাজ্যে নয়া সরকারকে নির্বাচন করবে উত্তরপ্রদেশ জনতা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনে গিয়ে বলেন, দেশের সব থেকে বড় রাজ্য হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উত্তরপ্রদেশের অনেক পিছিয়ে ছিল। আগের সরকার রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর জোর দেননি। আমরা সরকারে আসার পর রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে কুশীনগর বিমানবন্দর। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতিতেও ভালো কাজ করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলারও অনেক উন্নতি হয়েছে। কাজেই ৩৪১ কিলোমিটার লম্বা ছয় লেনের রাস্তা পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনে গিয়ে কার্যত যোগীর হয়ে ভোট প্রচার করেছেন মোদি।
অন্যদিকে পঞ্জাবেও ভোটের ঝুলি ভরতে কেন্দ্রের এই কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ক্যারিশমা দেখাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ক্যাপ্টেন অমরিন্দরের সঙ্গে বিজেপি জোট বাঁধলে পঞ্জাবে ভোটের সমীকরণও বদলে যেতে পারে।
রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২২-এর নির্বাচনে বেশ পরিকল্পনা মাফিকই এগোচ্ছে গেরুয়া শিবির, তা আজ মোদি সরকারের কৃষি আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেই আরও স্পষ্ট হল।