পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামে তাঁর ছোট্ট বাড়িতে এসেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বছরখানেক আগের কথা। সেদিন নিজে হাতে রেঁধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খাইয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মনিকা হাঁসদা । দুপুরে খাওয়ার ফাঁকে কঠিন অসুখে ভুগতে থাকা মেয়ের চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছিলেন বিভীষণ হাঁসদা। আশ্বাস মিলেওছিল।
তবে কেবলই আশ্বাস। আর কিছু নই। ভোটের মুখে চিকিৎসার আশ্বাস মিলেছিল। অভিযোগ, কেউ কথা রাখেনি। এক বছর পরেও মেয়ের কঠিন অসুখের চিকিৎসা চালাতে ভরসা বলতে বিভীষণ হাঁসদার জনমজুরির সামান্য উপার্জনই।
২০২০-র ৫ নভেম্বর বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এসেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে বিতর্কিত মূর্তিতে শ্রদ্ধা ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সেজে উঠেছিল বিভীষণের বাড়ি। সে দিন বাংলায় সফরে থাকা অমিত ছাড়াও বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ আরও অনেকেই।
বিভীষণের বাড়ির দেওয়ালে বিজেপি-র নির্বাচনী প্রতীক পদ্মফুলের পাশে ‘অমিতজি স্বাগতম’ লেখা এখনও জ্বলজ্বল করছে। অমিতকে কাছে পেয়ে খাওয়ার ফাঁকেই অসুস্থ মেয়ে রচনার কথা বলেছিলেন বিভীষণ। চিকিৎসার খরচ চালানো নিয়ে নিজের অসহায়তার কথাও জানিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, ছেলেবেলা থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা মেয়ের দিল্লির এমসে চিকিৎসা হবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও কথা রাখা হয়নি বলে বিভীষণের অভিযোগ।
বিভীষণ হাঁসদাকে পাশে বসিয়েই সেদিন মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন অমিত শাহ। খাওয়ার ফাঁকেই বিভীষণ অমিত শাহকে বলেছিলেন মেয়ে রচনা হাঁসদার কঠিন অসুখের কথা। সেদিন দিল্লির এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পর্যন্ত আশ্বাস মিলেছিল! তারপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফিরে যেতেই যদিও বিভীষণ হাঁসদাকে নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন। বিজেপির সাংসদ সুভাষ সরকার থেকে শুরু করে তৃণমূলের তৎকালীন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা সকলেই ঘন ঘন বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের পাশে থাকা ও মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে যথাসম্ভব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।
আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিভীষণ হাঁসদা ও তাঁর স্ত্রী মনিকা । ভেবেছিলেন উন্নত চিকিৎসা পেলে দ্রুত মেয়ে রক্তের কঠিন অসুখ কাটিয়ে ফিরতে পারবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে। তবে এইমসে চিকিৎসার তোড়জোড় দেখা না গেলেও, প্রথম প্রথম বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলের তরফেই চিকিৎসার ব্যাপারে পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা বিশ বাঁও জলে!
প্রতি মাসে মেয়ের চিকিৎসার জন্য খরচ হয় ৫ হাজার টাকা । মেয়ের চিকিৎসার এই বিপুল ব্যায়ভার মেটাতে এখন সম্বল শুধুই অন্যের জমিতে নিজেদের জনমজুরির সামান্য উপার্জন। যদিও স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার থেকে শুরু করে তৃণমূলের তৎকালীন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা অবশ্য বলছেন, তাঁরা বিভীষণের পাশেই আছেন । প্রয়োজন মতো চিকিৎসার খরচ থেকে শুরু করে ওই পরিবারের খোঁজখবর রাখা সবটাই চলছে নিয়মিত প্রতিশ্রুতি মতোই।