জাহির হোসেন, বারাসত: রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে তার পছন্দের নলেন গুড়ের পাটালি আর গামছা না দিতে পারায় আফসোস তার প্রাক্তন দেহরক্ষীর। সুব্রতবাবুর মৃত্যুতে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এমনই আফসোসের কথা জানালেন তার প্রাক্তন দেহরক্ষী শওকত আলি।
দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রাম পঞ্চায়েতের চিংড়িয়া গ্রামের শওকত আলি ছিলেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যাযয়ের দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করেছেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সুখ দুঃখের এবং রাজনৈতিক জীবনের বহু ঘটনার সাক্ষী তিনি।
শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে সুব্রতবাবুর প্রয়াত হওয়ার খবরটি শোনেন সওকত। দেহরক্ষী থাকাকালীন বিভিন্ন ঘটনার বহু খবর এবং ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে সেই সব ছবি সামনে রেখেই তার স্মৃতিচারণা করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রাক্তন দেহরক্ষী শওকত আলি
শওকাত আলি বলেন, সুব্রতবাবু ছিলেন আমার কাছে অভিভাবকের মতো। পরিবারের লোক মারা গেলে যেমন কষ্ট পাই সুব্রতবাবুর মৃত্যুতে আমি তেমনি কষ্ট পাচ্ছি। আমি আমার একজন অভিভাবককে হারালাম।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সাথে টুকরো টুকরো স্মৃতি চারণা করতে গিয়ে শওকত সাহেব বলেন, নয়ের দশকে কলকাতার একটি ঘটনা তার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছে। সে দিন কংগ্রেসের ডাকে বাংলা বন্ধ চলছিল। বন্ধের দিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়িয়াহাট মোড় থেকে পশ্চিম দিকে মিছিল যাচ্ছিল। মিছিলটা কিছুদূর যাওয়ার পরই সিপিএম মিছিলের উপর হামলা করে। ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। সেদিন সিপিএমের হামলায় সুব্রতবাবু এবং আমি দুজনেই আহত হয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। আমি সুব্রতবাবুকে নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে আমরা চারজন একটা বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেই। পরে পুলিশ আমাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল।
বসিরহাটের মাটিয়ার আকুঞ্জির গামছা আর টাকির নলেন গুড়ের পাটালি খুবই প্রিয় ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। শওকত আলি বলেন, সুব্রতবাবু বসিরহাটের গামছা এবং নলেন গুড়ের পাটালি খুবই পছন্দ করতেন। যখনই আমি দেশের বাড়িতে আসতাম তখনই আমি তার জন্য গামছা এবং শীতকালে নলেন গুড়ের পাটালি নিয়ে যেতাম। অবসর নেওয়ার পর অবশ্য সেভাবে সুব্রতবাবুর সাথে আর যোগাযোগ ছিল না। তাই নলেন গুড়ের পাটালি আর গামছা তার জন্য পাঠাতে পারেননি। তবে বিধানসভা ভোটের আগে শওকতের ছেলে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ লিয়াকত আলি সুব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সে সময় সুব্রতবাবু ছেলেকে নলেন গুড়ের পাটালি এবং গামছা আনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমার আফসোস পাটালি আর গামছা নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি চলে গেলেন।