রফিকুল হাসানঃ বিশ্বনবী দিবস উপলক্ষ্যে রবিবার সম্প্রীতি সভা অনুষ্ঠিত হল হাওড়া জেলার বাগনানের খাদিনান লাইব্রেরি মোড়ে। বাগনান বিশ্বনবী (সাঃ) দিবস উদ্যাপন কমিটির পরিচালনায় দুই দিন ব্যাপী আয়োজিত এই সম্প্রীতি সভার পাশাপাশি রক্তদান শিবির ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
সম্প্রীতি সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ও দৈনিক পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, খাজুট্টি খানকাহ শরীফের হজরত সৈয়দ শাহ আতেফ আলী আল কাদেরী আল হুসায়নী, পরমানন্দজী মহরাজ, বৌদ্ধ ধর্মগুরু ড. অরুণ জ্যোতি ভিক্ষু, শিখ ধর্মগুরু সর্দার সরণ সিংহ, ফাদার সঞ্জীব দাস, সমাজসেবী মুহাম্মদ এহতেসামুল হক, সেখ রাজা, হাজি আইয়ুব আলি খান অনন্তপুরী, হাফেজ নুরুল ইসলাম সহ বিশিষ্টজনেরা।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান নবী দিবস কমিটিকে শুকরিয়া জানিয়ে বলেন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর উপর আলোচনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সকলেই এই সভায় যোগ দিয়েছেন। এটা সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নজির। কেননা আমাদের নবী (সাঃ) কখনও মানুষে মানুষে বিভেদ করতে শেখাননি। নবী (সাঃ) সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু আজকে গোটা পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যায় সভ্যতা আজ নষ্টের পথে। তিনি সভায় আগত সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আজ আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে অশান্তি পাকাচ্ছে। কিন্তু নবী (সাঃ) সব ধর্মের লোককেই ভালোবাসতে শিখিয়েছেন।
তিনি শুধু বার্তা দেন নি, নিজেও সে কাজ তাঁর জীবনে বাস্তবায়িত করে গেছেন বলে জানান আহমদ হাসান ইমরান।
তিনি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একবার এক ইহুদির লাশ (মৃতদেহ) নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে সময় নবী (সাঃ) ওই লাশ দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। সাহাবীরা নবী (সাঃ) এঁর কাছে জানতে চাইলে বলেন, উনি ইহুদি তা কি হয়েছে। উনি একজন মানুষ, ওঁনার শেষ যাত্রার সম্মানার্থে আমি দাঁড়িয়েছি। এর থেকেই বোঝা যায় শুধু মুসলিমের প্রতি নয় মানুষের জন্য কি প্রেম ছিল নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর।
এদিন ইমরান সাহেব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মানবতার মূর্ত প্রতীক নবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে আজ অবমাননা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইসলামে নারীর অধিকার নেই বলে একদল মানুষ বলছে। এ ব্যাপারে আহমদ হাসান বলেন– নবী (সাঃ) মানুষের মুক্তির জন্য রহমত স্বরূপ এসেছিলেন। দাস প্রথার বিলুপ্তি নবীজিই করেছিলেন। কিন্তু আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে দেখছি নারীদেরকে দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি করানো হচ্ছে। যা এক ধরণের দাসত্ব বলে মনে করেন ইমরান। তিনি এর জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতিকে দায়ী করেন। আজকে ইউরোপের বহু দেশে পারিবারিক শান্তি নেই, মানসিক শান্তি নেই। আর যে কারণে বিভিন্ন মহিলারা মুসলিম ছেলেদের বিয়ে করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে জীবনযাপন করছেন। একথা আমি নয়, পিউ নামক একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থা বলছে বলে জানান তিনি।
এদিন নবী (সাঃ) এঁর বিদায় হজ্বের ভাষণের উদ্ধৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইমরান বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন সব মানুষ সমান। সাদার উপর কালো, কালোর উপর সাদার কোনও অধিকার নেই। তেমনি নারী-পুরুষেরও সম অধিকারের কথা তিনি বলে গেছেন। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ সহ পশু পাখিকে আদর করার কথাও নবী (সাঃ) বলেছেন। নবী (সাঃ) বিড়াল ভালোবাসতেন বলে ইমরান সাহেব তা মনে করিয়ে দেন।
অন্যদিকে, আহমদ হাসান ইমরান ত্রিপুরার ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যারা মসজিদ বা মন্দিরে আক্রমণ করে আসলে তারা মানুষ না। তারা হল দুষ্কৃতী। নবীজির শিক্ষা তারা গ্রহণ করেনি। আর তাই তারা সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। এই সমস্ত মানুষদের থেকে দূরে থেকে সুস্থ সমাজ গঠনের কথা বলেন তিনি।
এদিন হাফেজ নুরুল ইসলাম সাহেব বলেন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্তর ছিল বড়। তাই তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করে সকলকে তাঁর অন্তরে জায়গা দিতেন। কিন্তু র্দুভাগ্য আজকে আমাদের হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর পরামর্শ নবী (সাঃ) এঁর আদর্শে আদর্শিত হয়ে আমাদের হৃদয়কে বড় করতে হবে। তাহলেই আমাদের সমাজজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিন আরও উপস্থিত ছিলেন বাগনান ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সহিদুল মীর, বাগনান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন্দ দাস, সহসভাপতি নয়ন হালদার, স্থানীয় উপপ্রধান আসিফ রহমান, কাজল ভৌমিক, সমাজসেবী স্বপন পান্ডে প্রমুখ।
উল্লেখ্য, শনিবার বাগনান বিশ্বনবী (সাঃ) দিবস উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ২০০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি এদিন প্রায় ৭০ জন রক্তদান করেন। কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি সৈয়দ মুজিবর রহমান, সম্পাদক সেখ মুহাম্মদ সামসুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ নবাব মল্লিক প্রমুখ।