পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিতে মিটল ভোটপর্ব। গোসাবায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত ভোটের পরিসংখ্যান ছিল ১১ শতাংশ কাছাকাছি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারদের সংখ্যা। সকালের দিকে গোসাবা বিডিও অফিসের কন্ট্রোল রুমে বসে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা বুঝতে পারছিলেন না কেন এত কম ভোট পড়ল। তা নিয়েও চলে আলোচনা। কিন্তু বেলা বাড়তেই খেয়া নৌকাগুলি একের পর এক ভর্তি হয়ে যখন এপার-ওপার করতে শুরু করল তখনই বোঝা গেল ভোট দিতেই মানুষ আসছেন গ্রামে। কোনরকম অশান্তি ছাড়াই নির্বাচন প্রায় শান্তিতেই শেষ মিটল গোসাবাতে। তবে বহু বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি বিরোধীরা। বেশির ভাগ বুথ ছিল বিরোধী এজেন্ট শূন্য। শাসক দলের তরফে সমস্ত জায়গাতে একাধিক ক্যাম্প অফিস করা থাকলেও কোথাও বিরোধী দলের কোনও ক্যাম্প চোখে পড়েনি।
বিভিন্ন জায়গাতে ভোটের দিন ঘুরতে দেখা যাযü বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানাকে। শাসক তৃণমূলের অভিযোগ নির্বাচন ভঙ্গ করে ভোটারদের প্রভাবিত করছন তিনি। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মন্ডল সকালে বালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতে নিজের ভোট দিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন এলাকাতে। খতিয়ে দেখেন ভোটের পরিস্থিতি। তৃণমূল প্রার্থীর গলায় দলীয় উত্তরীয় থাকায় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করে বিজেপি।
অন্যদিকে গোসাবার প্রাক্তন বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের স্ত্রী অনিতা নস্কর এদিন ভোট দিতে আসেন চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিণ খালি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সঙ্গে ছিলেন ছেলে বাপ্পাদিত্য নস্কর। শুধু তাই নয় ভোট দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অনিতা দেবী। তিনি বলেন, জয়ন্তবাবুকে এলাকার মানুষ ভালোবাসতেন। সুব্রত জিতবে। আর তাকে ভালোবেসেই এই ভোট দিতে আসা।
এদিনেই ভোটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল জোরদার। বিভিন্ন খেয়াঘাটে গুলিতে চলছিল পুলিশের তরফের নাকা চেকিং। অন্যদিকে সেন্ট্রাল ফোর্সের জওয়ানরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রুট মাস করছিলেন। কয়েকটি বুথে ইভিএম বিভ্রাটের খবর মিলেছে। পরে অবশ্য তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। করোনা বিধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিটি বুথে। মাস্ক– স্যানিটাইজার ও গ্লাভস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতি বুথে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা হয়।
সড়ক ও জলপথে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে প্রতিটি দ্বীপ এলাকায়। ৪৩টি বুথে সিসিটিভি মনিটর ও ১৮৯টি বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আজ রবিবার সমস্ত ইভিএম কড়া নজরদারিতে চলে আসবে ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজ। আর সেখানেই মঙ্গলবার গণনা শুরু হবে এই উপনির্বাচনের।
অন্যদিকে শান্তিপুরের উপনির্বাচন শেষ হল শান্তিপূর্ণভাবেই। বিজেপি ও তৃণমূলের বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ ছাড়া তেমন বড় কোনও অশান্তির খবর মেলেনি। সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৬.১৪ শতাংশ।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিপুরে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। ২১৩টি আসনে জিতে ক্ষমতায় এলেও শান্তিপুরে বিজেপির কাছে হেরে যান তৃণংমূল প্রার্থী সদ্য প্রয়াত অজয় দে। তবে জগন্নাথ সাংসদ পদ রেখে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ায় মাস পাঁচেকের মাথায় এই আসনে উপনির্বাচন হল। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন ব্রজকিশোর গোস্বামী। বিজেপি প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস। বামফ্রন্ট প্রার্থী সৌমেন মাহাতো এবং কংগ্রেস প্রার্থী রাজু পাল। এই কেন্দ্রের জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ রাজ্য পুলিশ ছিল। একমাত্র শান্তিপুরে বামেরা কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে পরিসংখ্যান বলছে।
পাশাপাশি কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিতে সম্পন্ন দিনহাটার নির্বাচন। নিজের নাতিকে নিয়ে দিনহাটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট দেন উদয়ন গুহ। অশোক মন্ডল ভোট দেন নিজের কেন্দ্র দিনহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অন্য দিকে নিশীথ প্রামাণিক ভোট দেন ভেটাগুরি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিজের ভোট কেন্দ্রে। পাশাপশি আব্দুর রউফ ও নিজের কেন্দ্রে ভোট দিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণে বের হন।
এদিন ভোটদান পর্ব শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সকাল ৯ টা নাগাদ ১১.১২, সকাল ১১ টা নাগাদ ২৮.৭৩, দুপুর ১ টা নাগাদ ৪৭.৮৩, বিকেল ৩ টে নাগাদ ৬১.৫২, এবং বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ৬৯.৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ সকালের দিকে ভোট দান প্রক্রিয়া মন্থর হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
অপর দিকে বামেদের পক্ষ থেকে দিনহাটা মহকুমা শাসকের দফতরে লিখিত অভিযোগ জানান হয়েছে বিভিন্ন কারণে। বাম প্রার্থী আব্দুল রউফ জানিয়েছেন, আমাদের ১৮২ জন এজেন্টের মধ্যে কয়েকজনকে বুথের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি, বাকিরা বুথের ভিতরেই আছেন। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে, সেই কারণে মানুষ ভোট দিতে আসছেন না। এছাড়াও তিনি একজন এর বিরুদ্ধে একাধিক ভোট দেওয়ার অভিযোগ ও তোলেন।
অন্য দিকে ভেটাগুরিতে, নিশীথ প্রামাণিকের নিজের জায়গায় অনেক বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি। এ ব্যাপারে নিশীথ প্রামাণিক এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও এ বিষয়ে উদয়ন গুহ জানিয়েছেন, যদি কোনও এজেন্ট কে আমরা বসতে বাধা দিয়ে থাকি, তাহলে তার নাম বলুক, আমি নিজে গিয়ে তাদের বুথে বসিয়ে দিয়ে আসব। আর নিজের বুথে মন্ত্রী যদি এজেন্ট দিতে না পারে তাহলে তার পদত্যাগ করা উচিৎ।