জিশান আলি মিঞা, ডোমকল: সম্প্রীতির নজির মুর্শিদাবাদের সীমান্ত লাগোয়া জলঙ্গীর এনায়েতপুরে। এক হিন্দু যুবকের মৃতদেহ কেরল থেকে নিজের বাড়িতে আনার বন্দোবস্ত সহ তার সৎকারে এগিয়ে এলেন এলাকার প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ওই এলাকায় একটি প্রামাণিক ও সাত-আট টি ব্যাধ সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করেন। প্রামাণিক পরিবারের সদস্য বছর পয়তাল্লিশের অশোক প্রামাণিক কেরলে মারা যান গত ২২ অক্টোবর। পরিবারের লোকেদের দাবি তিনি কেরলের প্রেমবারোর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারে।
নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে মৃতদেহ কিভাবে বাড়িতে নিয়ে এসে শেষ বারের মত চোখের দেখা দেখবেন তা নিয়েও আতান্তরে পড়েন তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও আত্মীয়রা। খবর পেয়ে মৃত দেহ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন গ্রামের বাসিন্দা মাইনুদ্দিন মন্ডল, মাহাবুল ইসলামরা। তারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করার পাশাপাশি স্থানীয় বাজার থেকেও অর্থ সংগ্রহ করেন। অবশেষে অশোক প্রামাণিকের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনায়েতপুরের বাড়িতে আসে। ওইদিন রাতেই স্থানীয় কালিগঞ্জ শ্মশানে তার মৃতদেহ সৎকার করা হয়।
বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করার কাজেও সামিল ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরা। স্থানীয় বাসিন্দা মাইনুদ্দিন মণ্ডল, মাহাবুল সেখরা বলেন, আমরা একসঙ্গেই বসবাস করি। আমাদের সমবয়সী একজন প্রতিবেশী ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মারা গিয়ে তার দেহ বাড়ি ফিরবে না এটা হতে পারেনা। তাই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে মৃতদেহ নিয়ে আসা থেকে সৎকার সব কাজেই আমরা অংশ নিয়েছি। মৃতের বাবা বিপদভঞ্জন প্রামাণিক বলেন, আমাদের একসাথেই বসবাস। এখানে কোনো ধর্মের ভেদাভেদ নেই। এলাকার মানুষ যেভাবে আমাদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তা কখনও ভুলব না। তবে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মনে করছেন, চারিদিকে যখন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে এনায়েতপুরের যুব সম্প্রদায়ের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।