পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতাকে ঋদ্ধ করেছেন পরম যত্নে। তাঁর কবিতা জুড়ে বাংলার প্রকৃতি, নারী, প্রেম আর একাকিত্ব এসেছে ঘুরেফিরে। কবি তাঁর বালিশে মাথা রেখে শুনেছেন বিপন্ন মানুষের দীর্ঘশ্বাস । ১৮৯৯ সালে বরিশালে জীবনানন্দ দাশের জন্ম।১৯২১এ তিনি কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। পরে যুক্ত হন শিক্ষকতায়। ভারত ভাগের কিছুদিন আগে স্থায়ী হন কোলকাতায়।২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে ব্যতিক্রমী এই কবি আমাদের ছেড়ে চলে যান অনন্ত পরপারে।
জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।জীবনানন্দ বাংলা কবিতাকে অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছিলেন। কবিতা নিছক ছন্দ নয়। কবিতা মানে মিলিয়ে মিলেই কিছু কথা বলা নয়। কবিতা একটা প্রবল অনুভূতির শাব্দিক প্রতিধ্বনি।প্রকরণগত দিক থেকে দেখতে গেলে জীবনানন্দ বাংলা কবিতার একটা মাইল ফলক।তাঁর কবিতায় বাংলার রূপ একটা অন্য আঙ্গিকে ধরা পড়েছে। তাঁর কবিতা জুড়ে কোথাও হেমন্তের বাতাসের মত বিষন্নতা রয়েছে। রয়েছে বুক খালি করা একটা দীর্ঘশ্বাস।
বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন।সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।
জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয় ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি পায় সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার।জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন তিনি । তবে ১৯৫৪ সালে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।
সৃষ্টি, সংখ্যায় বিবেচিত হয় না।সৃষ্টির মূল্যায়ন হয় তার মৌলিকত্বে। কিছু কবিতা এমন রয়েছে যা মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তা মানুষের মনে ঠাইঁ পায়। জীবনানন্দের মা কুসুমকুমারী দাশের কবিতা তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
এই কবিতাটি বাঙালি মনে অমরত্ব পেয়েছে। হয়ত অনেকেই জানেন না যে এর রচয়িতা কে ? জন্মসূত্রে পদবি “দাশগুপ্ত” হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে জীবনানন্দ “গুপ্ত” বর্জন করে কেবল দাশ লেখা শুরু করেন। জীবনানন্দ দাশের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বাসিন্দা ছিলেন। পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন।সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন। পরে তাঁরা ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন।