হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন– তারপরেই দুর্গাপুজো। কিন্তু উৎসবের মরসুমে অতিমারির কথা ভুললে চলবে না। মানতে হবে যথাযথ করোনাবিধি। কিভাবে চললে উৎসবে মেতেও দূরে রাখা যাবে ভাইরাসকে? এম আর বাঙুর হাসপাতালের সুপার– ডাক্তার শিশির নস্করের কাছ থেকে তা সরাসরি জানলেন পুবের কলম-এর রক্তিমা দাস
প্রশ্নঃ অতিমারির মধ্যেই পুজো। অক্টোবর শেষেই তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা। উৎসবের মরসুমে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কি সুরক্ষা নেওয়া উচিত?
ডা. নস্করঃ প্রথম থেকেই যে সুরক্ষাবিধি মানতে বলা হয়েছিল– সেগুলোই কঠোরভাবে মানতে হবে। মাস্ক পরা– দূরত্ববিধি বজায় রাখা– বারবার হাত পরিষ্কার করা– তার জন্য স্যানিটাইজার বা সাবানের ব্যবহার এগুলো নিয়ম করে মানতে হবে। করোনাকে হালকা ভাবে দেখলে চলবে না। সেক্ষেত্রে ভয় নয়– সচেতনতার প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ কিন্তু উৎসবের দিনগুলোতে দূরত্ববিধি মানা সম্ভব হবে কি করে? সেক্ষত্রে কি করণীয়?
ডা. নস্করঃ নিজেস্ব গাড়ি থাকলে সেটাই ব্যবহার করা উচিত। অথবা হেঁটে যান– এতে কিছুটা হলেও দূরত্ববিধি মানা সম্ভব। পুজোর কটাদিন গণপরিবহন থেকে দূরে থাকায় উচিত। কারণ– পুজোতে প্রচুর মানুষ বাইরে থেকে আসেন। সেক্ষেত্রে গণপরিবহণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার একটা আশংকা থাকে।
প্রশ্নঃ উৎসবের পর কি সংক্রমণ বাড়ার আশংকা রয়েছে?
ডা. নস্করঃ মানুষ কিভাবে উৎসবের দিনগুলোতে চলাফেরা করবেন– তারপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে কি হবে। পুরোপুরিভাবে কোভিডবিধি মেনে চললে সংক্রমণ খুব একটা বেশি বাড়বে না। যেমনটা হয়েছিল আগের বছর। আগের বছর যথেষ্ট কড়াকড়ি করে মানুষকে কোভিডবিধি মেনে চলতে সাফল্যের সঙ্গে উৎসাহিত করেছিল রাজ্য সরকার– ফলে নভেম্বরের সময় থেকে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ উপসর্গহীনদের থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কিভাবে?
ডা. নস্করঃ এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখন ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকেই দেখা যাচ্ছে উপসর্গহীন। কিন্তু যতক্ষণ না তাদের সনাক্ত করা যাচ্ছে– ততক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না তারা কতটা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেই কারণেই পুজোয় জমায়েত না করাই ভালো।
প্রশ্নঃ পুজোয় বাচ্চাদের নিয়ে বেরোনো কতটা নিরাপদ?
ডা. নস্করঃ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভিড় যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ– বাচ্চারা ঠিকভাবে মাস্ক সামলাতে পারে না। বড়োরা কষ্ট হলেও মাস্ক পরছে– কিন্তু বাচ্চাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। ফলে পুজোয় বাচ্চাদের নিয়ে না বেরোনোই ভালো। যারা ঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে পারে– তাদের জন্য অবশ্য সমস্যা কম।
প্রশ্নঃ বর্তমানে মাস্ক একটা ফ্যাশনের অঙ্গ হয়ে গেছে। ভালো জামা-কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচিং করা মাস্ক পাওয়া যায়। সেই মাস্কগুলো কতটা কার্যকর?
ডা. নস্করঃ ম্যাচিং করা যে মাস্কগুলো পাওয়া যায় তা সাধারণত কাপড়ের তৈরি। কিন্তু কাপড়ের মাস্ক পরা না পরা প্রায় সমান। করোনা ভাইরাসের জীবাণু আটকানোর জন্য যে ধরণের প্রটেকশনের প্রয়োজন তা একমাত্র এন-৯৫ মাস্কেই আছে। তবে আমাদের দেশে সকলের পক্ষে এন-৯৫ মাস্ক কেনা সম্ভব নয়। তাঁরা কিছু না ব্যবহার করার থেকে দুটি কাপড়ের মাস্ক একসঙ্গে পরতে পারেন। তবে তিনটি লেয়ার থাকলে ভাল হয়।
প্রশ্নঃ পুজোর সময় বাইরের খাবার কতটা নিরাপদ?
ডা. নস্করঃ পুজোর সময় রেস্তোরাঁয় খাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে মানুষের। কিন্তু রেস্তোরাঁয় বসে সবাই যখন একসঙ্গে খাচ্ছেন– তখন কারোর মুখে মাস্ক নেই। এদিকে বদ্ধ ঘর– ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। অন্যদিকে স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও সেই একই ভয় থাকছে। তবে একন্তই যদি কেনা খাবার খেতে ইচ্ছা করে– তাহলে তা কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে খান। তাহলে সংক্রমণের ভয় অনেক কম। তবে বাইরের খাবারের প্রভাব শরীরে যেমন পড়ে তা তো পড়বেই।
প্রশ্নঃ প্যানডেমিক ফ্যাটিগ বিষয়টা ঠিক কি?
ডা. নস্করঃ মহামারির অবসাদকে বলা হয় প্যানডেমিক ফ্যাটিগ। দীর্ঘদিন ধরে একটা মহামারির পরিবেশে কাটাতে কাটাতে মানুষের মনে অবসাদ আসে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বই পড়ুন– গান শুনুন– বাড়িতে বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটান। কারণ– বাড়িতে দূরত্ববিধি মানা সম্ভব হয়।
প্রশ্নঃ কলকাতা তথা গোটা রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষের টিকার প্রথম ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজও নিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। তাঁদের অনেকেরই একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে– টিকা নেওয়া সম্পন্ন মানেই ভাইরাস থেকে আর ভয়ের কারণ নেই। এটা কতটা ঠিক?
ডা. নস্করঃ যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তাঁদের থেকে বেশি যাঁরা টিকা নেননি। কিন্তু তাই বলে টিকা সম্পন্ন ব্যক্তিরা পুরোপুরি নিরাপদ নন। একটা উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে– একজন টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছে– অথচ ফের করোনা আক্রান্ত হলেন। তাঁর ক্ষেত্রে ভাইরাস যদি ৫০ শতাংশ প্রভাব খাটাতে পারে– তাহলে ১০০ শতাংশ প্রভাব খাটবে তাঁর ওপর যিনি টিকা নেননি। অন্যদিকে যাঁরা টিকা নিয়েছেন তারপরেও আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে দ্রুত সেরে ওঠার হার বেশি। সুতরাং টিকা যেমন নিতে হবে– তার সঙ্গেই সমানভাবে মানতে হবে করোনাবিধি।